তিনি নবাব আমরা সেপাই

Jnaza_Anware Hossain FDC জানাজা আনোয়ার হোসেনরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সহকর্মীদের কারো কাছে তিনি গুরু, কারো কাছে আবার বড় ভাইয়ের মতো। তবে সবাই একবাক্যে বললেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মুকুটহীন নবাব’ হিসাবে দর্শকের মনে স্থান করে নেয়া আনোয়ার হোসেন শেষ পর্যন্ত ছিলেন সত্যিকারের একজন ভাল মানুষ।

শুক্রবার এফডিসিতে আনোয়ার হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে তাকে এভাবেই স্মরণ করেন তার সহকর্মী, সহযোদ্ধারা।

স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে নির্মিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে সেই ঊনিশশ ষাটের দশকেই আনোয়ার হোসেন হয়ে ওঠেন ‘বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাব’।

এরপর কয়েকশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সেই সম্রাজ্য তিনি শাসন করেন প্রায় চার যুগ।

বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে নির্মিত পরিচালক জহির রায়হানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’সহ বহু ছবিতে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করেছেন নায়ক রাজ্জাক, দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় দর্শক যাকে চেনে ‘নায়ক রাজ’ হিসাবে।

এফডিসিতে ‘নবাবের’ কফিনে ফুল দিয়ে ‘নায়ক রাজ’ বলেন, “তিনি শুধু নবাব নন, তিনি ছিলেন আমাদের বড় ভাই। যে কোনো চলচ্চিত্রের যে কোনো চরিত্রে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত। তিনি ছিলেন যোদ্ধা, আমরা সবাই তার সেপাই।”

অর্ধ শতকেরও বেশি সময় বাংলা চলচ্চিত্রে সরব পদচারণার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই অভিনেতার। তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর।

আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ভোরে আনোয়ার হোসেনের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় তার কলাবাগানের বাসায়। চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই এই অভিনেতাকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে ছুটে যান ।

শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে আনোয়ার হোসেনকে নেয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আনোয়ার হোসেন।

তার জন্ম ১৯৩১ সালে,  জামালপুরের সরুলিয়ায়। অভিনয়ে হাতেখড়ি স্কুল জীবনেই। ১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন তিনি।

কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), বন্ধন (১৯৬৪), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), রংবাজ (১৯৭৩), ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), রুপালী সৈকতে (১৯৭৭), নয়নমণি (১৯৭৭), নাগর দোলা (১৯৭৮), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সূর্য সংগ্রামের (১৯৭৯) মতো বহু চলচ্চিত্র আগামী প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে পর্দার এই ‘নবাবের’ কথা।

‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া আনোয়ার হোসেন পরে আরো দুই বার এ পুরস্কার পান। ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় এই গুণী শিল্পীকে। বাংলা চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ