এক বছরের বিক্রি এবার এক মাসেই
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৬২৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান।
পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলোর আমানতে সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ৬২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
গত বছরের জুলাই মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০৯ কোটি টাকা, পুরো অর্থবছরে ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এর আগের অর্থবছরে (২০১১-১২)সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআ্ইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, মানুষ এখন নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।
এছাড়া বিপুল অঙ্কের অলস অর্থ (বিনিয়োগ হচ্ছে না এমন টাকা) পড়ে থাকায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
জায়েদ বখত বলেন, “মানুষ এখন নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। শেয়ারবাজারে ধস এবং হল-মার্কসহ নানা কেলেঙ্কারির কারণে তারা আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এ কারণেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে বলে আমার মনে হয়।”
সঞ্চয় পরিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, জুলাই মাসে ৬২৫ কোটি টাকার যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তার ৮০ ভাগই পরিবার সঞ্চয়পত্র। অন্য সঞ্চয়পত্রগুলোর তেমন চাহিদা নেই।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। বিক্রি কম হওয়ায় পরে তা কমিয়ে ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু এটাও নিতে পারেনি সরকার। কেননা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ওই সময়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করার মাধ্যমে গ্রাহকদের মূল ফেরত দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকেই নিট বা প্রকৃত বিক্রি ধরা হয়।
পরিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার। একই সময়ে গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বা মূল পরিশোধ বাবদ খরচ হয়েছে ২২ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে জানুয়ারি মাসে ২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে কম ১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে।
তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে যে অর্থ নিয়েছে সরকার, তার চেয়ে বেশি আসল পরিশোধ করেছে সেপ্টেম্বর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও এপ্রিল মাসে। এই মাসগুলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি পরিস্থিতি ঋণাত্মক পর্যায়ে ছিল।
বর্তমান সরকারের প্রথম দুই অর্থবছরে (২০০৯-১০ ও ২০১০-১১) সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ করেছিল সরকার।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার প্রকৃত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। আর পরের বছর এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্র, প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ছয় মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।