মিশা-জায়েদকে বয়কটে কড়া প্রতিবাদ শিল্পীদের, সমালোচনার মুখে ১৭ সংগঠনের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২০ জুলাই ২০২০) : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পীরা। চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারাকা শিল্পীরা এমন এক তরফা সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, করোনাকালীন সময়ে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে আসুন আমরা সবাই অসহায়-অসচ্ছল শিল্পী-কুশলীদের পাশে দাড়াই। সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে আসুন। বয়কটের নামে আপনারা যা করছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এটা সবার কাছে পরিষ্কার। অন্ততঃ এই করোনাকালীন সময়ে প্রযোজক-পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দের মানষিকতার পরিবর্তন আনতে আহবান জানান চলচ্চিত্র শিল্পীরা।
গতকাল রোববার (১৯ জুলাই) বিকেলে বিএফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্য দেন সমিতির নেতৃবৃন্দ ও তারকা শিল্পীরা। সংবাদ সম্মেলনটি এক সময় বিক্ষোভে পরিনত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অঞ্জনা সুলতানা, মাসুম পারভেজ রুবেল, মাসুম বাবুল, আরমান, আসিফ ইকবাল, মারুফ আকিব, আব্দুল আজিজ, জ্যাকী আলমগীর, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপদেস্টা পরিষদের সদস্য ইলিয়াস কাঞ্চন এবং মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সিনিয়র সদস্যরা প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেন। তারা বলেন, এর আগেও অনেক সংগঠনের মাঝে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, আবার আলোচনার পর বন্ধ দুয়ার খুলেও গেছে। কিন্তু কখনো দেখিনি কোন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আর একটি সংগঠন বয়কট বা অবাঞ্চিত করেছে। সুতরাং এটা শিল্পীদের কাছে স্পষ্ট… এটা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সিদ্ধান্ত।
মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কটের সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিনিয়র শিল্পীরা বরেলন, শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষাণের জন্যইতো এই সংগঠনের নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শিল্পীরাও এ কারণেই তাদের নির্বাচিত করেছেন। বরং এর ব্যতিক্রম হলে শিল্পীরাই মিশা ও জযেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতেন। তারা কোন অপরাধ করেননি।
তারাকা শিল্পীরা এমন এক তরফা সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে প্রযোজক-পরিচালক সমিতির উদ্দেশ্যে বলেন, করোনাকালীন সময়ে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে আসুন আমরা সবাই অসহায়-অসচ্ছল শিল্পী-কুশলীদের পাশে দাড়াই। সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে আসুন। বয়কটের নামে আপনারা যা করছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এটা সবার কাছে পরিষ্কার। অন্ততঃ এই করোনাকালীন সময়ে প্রযোজক-পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দের মানষিকতার পরিবর্তন আনতে আহবান জানান চলচ্চিত্র শিল্পীরা। শিল্পীরা মনে করেন, চলচ্চিত্র শিল্প একটি পরিবার। এই পরিবারে মানঅভিমান হবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা বাইরে প্রচার না করে নিজেদের মধ্যেই সমাধান করা শ্রেয়ো ছিলো।
নিজের ও সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এই প্রতিবাদ সভা করতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতায় বলেন মিশা সওদাগর। কোনো একটি বিষয় নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি থাকার পরেও সবাইকে নিয়ে ঐক্য চান এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রকম দলাদলি, হিংস্রতা, বিদ্বেষ চাই না। আমরা চাই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। আমাদের শিল্পী সমিতির মূল কাজ শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। আমরা সবাইকে সম্মান করে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ একটাই, আমাকে বয়কট করা হলো। জায়েদের যদি কোনো অন্যায় থাকে, আমাদের লিখিত আকারে দিতেন। আমরা নিজেরা বসে সমস্যার সমাধান করতাম। কিন্তু এখন তা বড় আকার ধারণ করল। আমরা চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে শান্তি চাই। আমরা শিগগিরই ক্ষণিকের ভুলটাকে শুধরে নেব। যদি না হয়, তাহলে সাংগঠনিকভাবে আমরা সাত দিনের কর্মবিরতিতে যাব।’
নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? তা সঠিকভাবে জানেন না জায়েদ খান। তেমন কোনো চিঠি বা লিখিত কিছুই তিনি পাননি। তিনি মনে করেন, তাঁকে বিপদে ফেলতেই বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মিথ্যা মামলার পাঁয়তারা করছেন অনেকে। তিনি বলেন, ‘আমি কী এমন করেছি, যে কারণে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। এখানে অন্য কাউকে নয়, আমাদের দুজনকে (মিশা–-জায়েদ) ছোট করা হচ্ছে। শিল্পীকে কেউ এভাবে বয়কট করতে পারেন না। কেন চলচ্চিত্র অঙ্গনকে তাঁরা একটি সার্কাসে পরিণত করছেন। রাত নেই, দিন নেই আমি শিল্পী সমিতির সবার স্বার্থে কাজ করেছি। আমি সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। নিজেকে আমি নেতা ভাবি না, আমি সেবক। এরপরও কেন আমাকে বিপদে ফেলা হচ্ছে? আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলী, যাঁরা আমাদের অভিভাবক, তাদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে বলা যেত। নায়ক ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই, উজ্জ্বল ভাই, ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই, ডিপজল ভাই আছেন, তাদের বলতে পারতেন। দয়া করে আপনারা পেছন থেকে ষড়যন্ত্র না করে আসুন কীভাব সিনেমা বানানো যায়, সেই চিন্তা করি। আসুন, এক হয়ে কাজ করি।’