সংসদ নির্বাচনেও রাজি নয় মহিউদ্দিন

Mayor Mohiuddin মেয়র মহিউদ্দিনরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, চট্টগ্রামঃ আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো ‘পরিকল্পনা’ নেই বলে জানালেন চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেয়ার তিন দিনের মাথায় শনিবার আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের এক সভায় একথা জানান বন্দর নগরীর সাবেক মেয়র।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে  কোতোয়ালি আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছে হেরে যান।

এরপর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে চতুর্থবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০১০ সালে হেরে যান।

মহিউদ্দিন সকালে নগরীর মুসলিম হলে নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, “অনেকে বলেছেন-প্রার্থী হওয়ার জন্য। প্রার্থী হওয়া বড় কথা নয়।

“এই নির্বাচনে কোনো অবস্থার প্রেক্ষিতেই প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা নেই। কাজ করছি, করে যাব। পদ বড় কথা নয়।”

চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে কক্সবাজার, নোয়াখালী ,বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে প্রার্থীদের পক্ষে দায়িত্ব দিলে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

“মহিউদ্দিন চৌধুরীর পদের প্রয়োজন হয় না। মহিউদ্দিন চৌধুরী জনগণের কাজ করে।”

‘আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরীর সংসদীয় আসন সমূহে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ওই সভায় আয়োজন করে নগর আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিউদ্দিন।

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ধারাবাহিক বৈঠক চলার মধ্যে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের এই সভা হল।

এই মতবিনিময় সভা নিয়ে গত কয়েকদিন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন চলছিল। এই সভায় মহিউদ্দিনের প্রারর্থিতা ঘোষণা করা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাংসদ এম এ লতিফ এই সভাকে ‘স্বাগত’ জানালেও তীব্র বিরোধিতা করেন মহিউদ্দিনবিরোধী হিসেবে পরিচতি কোতোয়ালি আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি।

চট্টগ্রাম নগরীর চারটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের তিন সাংসদ এম এ লতিফ, নুরুল ইসলাম বিএসসি ও ডা. আফসারুল আমীনের কেউই সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

নগরীর বাকি আসন বোয়ালখালী-চান্দগাঁও থেকে নির্বাচিত মঈনুদ্দিন খান বাদল আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা।

মতবিনিময় সভায় নগরীর চারটি সংসদীয় আসনে মোট ১৬ জন নেতা নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা করেন।

মহিউদ্দিন বলেন, “অনেকে আজকের আয়োজনের সমালোচনা করেছেন। অনেক প্রার্থী আসেননি। কেউ কেউ এসেছেন। কারও মতামতকে অগ্রাহ্য করছি না। প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।”

গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “বিগত দিনে প্রার্থী অনেকের মনঃপুত হয়নি। তবে আমরা কাজ করেছি। তাই তারা বিজয়ী হয়েছে।”

পরিকল্পিতভাবে কাজ করে আগামী নির্বাচনে চার আসনেই দল মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের বলেন তিনি।

প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের মোট ছয়শ কর্মীকে ২০ জন করে ভোটারের ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশনা দেন মহিউদ্দিন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা

সভায় নগরীর বোয়াখালী-চান্দগাঁও আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেদের নাম ঘোষণা করেন নগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহাম্মদ।

কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল আলম দোভাষ, নগর আওয়ামী লীগ সদস্য আ জ ম নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও ব্যবসায়ী সৈয়দ ছগীর আহমদ।

পাহাড়তলী-ডবলমুরিং আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী চারজন হলেন নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এ কে এম বেলায়েত হোসেন, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজের ছেলে ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, যুবলীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনে সর্বোচ্চ ছয় জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নিজেদের নাম ঘোষণা করেন।

এরা হলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন, যুবলীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আলতাফ হোসেন বাচ্চু, বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলম, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী, মক্কা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল ও সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার।

এদের মধ্যে খোরশেদ আলমকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও পরে তা পরিবর্তন করে এম এ লতিফকে প্রার্থী করা হয়।

সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারী আসনের সঙ্গে নগরীর দুটি করে ওয়ার্ড থাকায় সভায় এ দুই আসনেও আগ্রহী প্রার্থীর নাম জানতে চাওয়া হয় সভায়। তবে এ দুই আসনে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন না।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর নগর যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান দাঁড়িয়ে নগরীর কোতোয়ালি বা বন্দর আসনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান বলে জানান।

তবে সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অসম্মতির কারণে মশিউরকে মঞ্চে এসে নাম ঘোষণা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ