গুণগত দিকেও বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জনের তাগিদ শিল্পমন্ত্রীর

প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,ঢাকাঃ শিল্পায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পণ্যের দৃষ্টিনন্দন মোড়ক নয়, গুণগত মানের ক্ষেত্রেও বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি।

শিল্পমন্ত্রী আজ ৫১তম বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে বিএসটিআই আয়োজিত “শিল্পখাতের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন: নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবী গড়তে ‘মান’ এর ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের যে অবস্থানে পৌঁছেছে, শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিএসটিআইকেও সে পর্যায়ে উন্নীত হতে হবে। তিনি গ্রাম-গঞ্জে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিএসটিআই’র কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ড. মোঃ নজরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম এবং এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর মতো প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুণগত শিল্পায়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে একমাত্র মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গুরুদায়িত্ব বিএসটিআই এর ওপর বর্তায়। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বিএসটিআইকে একটি আধুনিক মান নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ের দপ্তরগুলোতে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে মানসম্মত শিল্পায়ন জোরদারের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা হবে। তিনি নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিএসটিআই’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের মধ্যে পণ্য ও সেবার গুণগত মান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পেশাদারিত্বের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য বিএসটিআইয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার চলমান করোনা পরিস্থিতিতে পণ্যে ভেজাল রোধে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, করোনার এই ক্রান্তিলগ্নেও কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নানাভাবে নষ্ট ও ভেজাল পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারিত করছে। এরা যত বড় ব্যবসায়ী হোক না কেন এদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে প্রতিমন্ত্রী হুঁশিয়ার করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় বাজারে বিক্রি কিংবা বিদেশে রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রের জন্য উৎপাদিত পণ্যের মান যাচাইয়ে বিএসটিআইকে আরো কঠোর হতে হবে। পণ্যের মান সঠিক হলে মালিক, শ্রমিক এবং সরকার সকলেই লাভবান হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মানহীন ও ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য প্রতিমন্ত্রী এসময় গনমাধ্যমেকে ধন্যবাদ জানান।

জনগণের জন্য মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে উল্লেখ করে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্রগ্রাম ও খুলনায় বিএসটিআই’র কার্যালয়ে নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ ও ফরিদপুর, কুমিল্লা ও কক্সবাজার জেলায় বিএসটিআই’র নতুন কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সর্বত্র সকল পণ্যের মান দ্রুত নির্ধারণ করার লক্ষ্যে আগামীতে সকল জেলায় বিএসটিআইয়ের কার্যালয় ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন করলে ক্রেতারা ঠকবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতা হারাতে হবে। শিল্প সচিব দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সমন্বয় বজায় রেখে মানসম্পন্ন রুচিসম্মত পণ্য উৎপাদন করার পাশাপাশি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রমকেও মানসম্মত করার আহবান জানান। বিএসটিআই’র বিভাগীয় শহরের ল্যাবরেটরিগুলোকে অ্যাক্রেডিটেশনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে শিল্প সচিব এসময় অবহিত করেন।

এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম দেশে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের মান বজায় রাখতে বিএসটিআই কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি রপ্তানির বাধাসমূহ অপসারণ ও কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া আরও সহজতর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআইয়ের প্রতি আহবান জানান।

সভাপতির বক্তৃতায় বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ড. মোঃ নজরুল আনোয়ার বলেন, মান প্রনয়নের পাশাপাশি মান বজায় রাখা, লাইসেন্সবিহীন পণ্য এবং নকল পণ্য/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএসটিআই অভিযান/মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে বিএসটিআই সারাদেশে ১০৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৮৯টি মামলা দায়েরসহ ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছে এবং ১৪৫টি সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক জানান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ