বিজয়ের মহানুভবতা, লাখ টাকার ক্যামেরা ফিরে পেলেন জাবি শিক্ষার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৬ এপ্রিল ২০২১) : জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব-বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র সাকিব আহমেদ গত রোববার (৪ এপ্রিল) রাতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলে ইশাখাঁ পরিবহন একটি বাসে। নরসিংদী বাসস্ট্যান্ড থেকে এ পরিবহনে ছোট শিশুপুত্রকে নিয়ে ওঠেন এক যাত্রী। বসেন সাকিব আহমেদের পাশের সিটে। ‘কোথায় যাবেন’ সাকিবের এমন প্রশ্নের জবাব না মেলায় শিশু পুত্রের কাছে জানতে চাইলে তার ঝটপট জবাব.. ঢাকার বাসাবোতে যাবো। ‘বাবা কথা বলতে পারেন না’ তাও জানিয়ে দেয় সাকিবকে। জানায় তার বাবার নাম সৈয়দ মাহাতাব রহমান বিজয়। বয়স ৫০ এর কোঠায়। রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় এসে ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়ে বাসটি।
প্রায় সারে ৩ ঘন্টা এখানে আটকে থাকার পর রাত ২টার দিকে ক্ষুধার তারনায় সাকিব আহমেদ পাশের এই লোকটিকে (বিজয়) ক্যামেরাসহ ব্যাগটিকে একটু দেখে রাখার জন্য বলে বাস থেকে নামে। এ সময় রাস্তার দুই পাশ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ অধৈর্য হয়ে পাঁয়ে হেটে ছুটছিলো। রাস্তার পাশের একটি দোকান থেকে পানি আর চা খাওয়ার মধ্যেই ফাঁকা পেয়ে সব বাসগুলো টেনে অনেকটা সামনে চলে যায়।
এরই মধ্যে সাকিব দৌড়ে বাসের পিছু নেয়। তবে অনেকটা পথ পেরিয়ে আবারো জ্যামে পড়ে থাকা বাসটি পেলেও বাসে ক্যামেরার ব্যাগটি পায়নি। বাসে তখন কোন যাত্রীও ছিলো না। নতুন করে যানজটে পড়ায় সবাই নেমে গেছে। প্রায় ২ লাখ টাকার ক্যামেরা ও লেন্সসহ ব্যাগ হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাকিব। প্রিয় ক্যামেরাটি হারিয়ে ফেলার কথা বাসায় জানায়। এসময় তার বাসার সবার মাঝে নেমে আসে হতাশা। তবে সাকিবের মায়ের আত্মবিশ্বাস ছিলো, ক্যামেরা পাওয়া যাবে। সাকিবকে সান্তনা দিয়ে তিনি বার বার সে বলছিলেন….‘আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায় জমানো টাকা দিয়ে কিনে দেয়া ক্যামেরা এভাবে খোয়া যেতে পারে না’ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
অবশেষে সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মহান মানুষ বিজয় এর বাসা থেকে সাকিবের মোবাইল নাম্বারে কল আসে। বিজয়ের ভাগ্নী সাদিয়া জানায়…. সেই রাতে যখন বাসটি থেকে সবাই নেমে যাচ্ছিলেন, তখন খালি বাসে ব্যাগটি না রেখে তার মামা (বিজয়) ব্যাগটি সাথে করে নিয়ে আসেন। তার ভাগ্নী ব্যাগটি ফেরত দিতে ব্যাগে সাকিবের ঠিকানা-ফোন নাম্বার খোঁজেন। কিন্তু তা না পেয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চিকিৎসা-পত্র থেকে সেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সাকিবের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে কল দেন। নিমিষেই আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সাকিবদের বাসায়। বড় ভাইকে সাথে নিয়ে সাকিব ছুটে যায় বাসাবোতে বিজয়’য়ের বাসায়। পরিবারের সবাই মিলেই সাকিবের হাতে তুলে দেয় ক্যামেরাসহ ব্যাগটি।
বাকশক্তি হারানো সৈয়দ মাহাতাব রহমান বিজয়ের এমন মহানুভবতায় সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। শুকরিয়া আদায় করে বিজয়ের জন্য দোয়াও করেন তারা। বিষয়টি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায়।