সচেতনতায় পুলিশের প্রানপন চেষ্টা, উদাসিন সাধারণ মানুষ, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

তাসনীয়া আজাদ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা (২৩ এপ্রিল ২০২১) : করোনায় মুত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিনই পূর্বের মৃতের রেকর্ড ভাঙছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। তবুও সাধারণ মানুষের মাঝে নেই কোন সচেতনতা। সরকারের দেয়া লকডাউন পালনেও চরম অনিহা সাধারণ মানুষের। কাজে-অকাজে বেড়িয়ে পড়ছেন তারা। এর পরিনতি যে কতটা ভয়বহ হতে পারে, তা অনুধাবন করছেন না কেউই। দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমে পুলিশকে এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, করোনা মোকাবেলায় সরকারের ঘোষিত লকডাউনের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে দায়িত্ব শুধুই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ পুলিশের। আর সবাই থাকবেন উদাসিন। তবে এ বিষয়ে বিশিষ্টজনরা বলছেন, ছাড় দিয়ে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন কঠিন। রাষ্ট্রের জরুরী বিষয়গুলো ছাড়া সবই বন্ধ রাখতে হবে। নইলে এর সুফল পাওয়া যাবে না।

গত ১৭ এপ্রিল করোনায় একদিনে মৃত্যু শতকের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর প্রতিদিনই শতকের ঘরে, কখনো এর আশপাশে অবস্থান করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু ১১২ জনের। তাছাড়া ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, আক্রান্তদের বেশিরভাগই তরুণ এবং মধ্যবয়সী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটও (আইইডিসিআর) একই তথ্য জানায়। করোনায় মৃতদের বেশিরভাগই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, তার সঙ্গে বর্তমান করোনার ঢেউতে যুক্ত হয়েছে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সরকারের দেয়া লকডাউন পালনে সাধারণদের অনাগ্রহ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাঠে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, লকডাউনে নানা টালবাহানা করে ঘর থেকে বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যেসব অজুহাত তারা দেখাচ্ছেন, তার সবটাই মিথ্যা। অর্থাৎ জরুরী নয়, এমন কাজে-অকাজে বেড়িয়ে পড়ছেন তারা।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, জরুরী কাজ তো নয়ই, কেউ কেউ লকডাউন দেখতেও ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ লকডউনকে যদি আমরা উৎসব হিসেবে নেই তবে, এর পরিনতি হতে পারে ভয়াবহ। এটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। আর সবাইকে ঘরে রাখার দায়িত্ব শুধু পুলিশেরই নয়, সেটাও আমাদের উপলদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশের গাড়ি দেখে সবাই সড়কের অলি-গলিতে ঢুকে পড়ছে, আবার পুলিশেরর বিপদ।

এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, ছাড় দিয়ে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন কঠিন। লকডাউনে রাষ্ট্রের জরুরী বিষয়গুলো ছাড়া সবই বন্ধ রাখতে হবে। নইলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি সরকারের মুভমেন্ট পাস দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।

ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের গত ১৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ বলে, আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম সারিতে আছেন ২৫- ৩৪ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীরা। এরপর আছে ৩৫-৪৪ বছর বয়সী এবং ৪৫-৫৪ বছর বয়সীরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একদিনে শনাক্তের প্রায় ৬৯ শতাংশ পাওয়া গেছে ১৯ থেকে ৪৮ বছর বয়সীদের মধ্যে। ২৭ শতাংশ পাওয়া গেছে ৪৯ বছরের ওপরে এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে। অর্থাৎ তরুণ এবং মধ্যবয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

গড়ে মারা যাচ্ছে ১০১ :
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছে ২৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ , ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত ৬দিনে গড়ে মারা গেছেন ১০১ জন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ