চাকরি হারানোরা হতাশা নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন হাজারো মানুষ
হালিম মোহাম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৮ মে ২০২১): প্রতি বছর ঈদ উৎসবে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামের পানে ছোটেন লাখ লাখ মানুষ। বলা হয় নারির টানে ছুটছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এদের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ ছুটছেন হতাশা আর বেদনা নিয়ে। আশাহত এসব মানুষ ঢাকায় পোশাক কারখানায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসে ঘর বেঁেধ ছিলেন ঢাকাতে। করোনায় চাকরি হারানোয় তাদের সব আশা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।
রাজধানীর একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মী শফিক মিয়া। অনেক আশা নিয়ে গত শবে বরাতের ছুটিতে (২৯ মার্চ) গ্রামের বাড়ি গিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। স্বপ্ন ছিল, এক কক্ষের ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে কষ্ট করে হলেও স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের সঙ্গে রাখবেন।
কিন্তু শফিক মিয়াকে ফিরে যেতে হচ্ছে গ্রামে। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-সন্তানও। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল সরকার লকডাউনের ঘোষণা দেওয়ার পরই শফিকের পোশাক কারখানার কোয়ালিটি অপারেটরের চাকরিটা চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের অনিশ্চিত জীবন ফেলে বিষণ্ন মুখে শফিকেরা ফিরছেন গ্রামের বাড়ি।
শফিক মিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কত স্বপ্ন নিয়া বউ-বাচ্চাকে ঢাকায় আনছিলাম! লকডাউনে আমার চাকরিই চলে গেছে। তাই উপায় না দেখে গ্রামে ফিরে যাচ্ছি।’ কারখানায় বেতনের পাওনা টাকার জন্য এত দিন অপেক্ষা করেছিলেন বলেও জানান তিনি।
শুধু শফিক মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরাই নয়, এমন অনিশ্চয়তায় শত শত মানুষ গাবতলীর বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে ভিড় করছেন। কীভাবে যাবেন, কত ভাড়া লাগবে, আদৌ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কি না—এমন নানা প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। তবু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাড়িফেরা মানুষের দর–কষাকষি চলছেই।
সিরাজগঞ্জের দুই ভাই রিপন আলী ও পলাশ আলী। কেরানীগঞ্জে থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। করোনার কারণে তাদের কাজ বন্ধ রয়েছে। আয়-উপার্জন নেই। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। রিপন আলী বলেন, ‘লকডাউনের পর থেকেই কাজ নাই, কামাইও নাই। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি। যদি সেখানে কোনো দিনমজুরের কাজ জোটে, তাহলে অন্তত খাওয়ার টাকা জোগাড় হবে।’
শনিবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ধরে দুজনে মিলে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে যাওয়ার অনবরত চেষ্টা করতে থাকেন। এভাবে চেষ্টার পর এক পর্যায়ে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে হতাশ হয়ে ফুটপাতে বসে পড়েন দুজনেই।