দেশজুড়ে আতংক ডেল্টা ভেরিয়েন্ট
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২০ জুলাই ২০২১) : করোনা ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ এখন দেশজুড়ে আতংক। করোনার এ ধরনটিতে আক্রান্তের পর-পরই প্রয়োজন হয় অক্সিজেন সাপোর্টের। না মিললে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে আক্রান্তের। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ঠেকাতে দেশে প্রবেশের সবগুলো সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আবার খুলেও দেয়া হয়। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি। হাসপাতালগুলোতে ঠাই নেই। মিলছে না অক্সিজেন, মিলছে না আইসিইউ সাপোর্ট। স্থান সংকুলন হচ্ছে না লাশ রাখার। এসব নিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই করোনার নতুন ধরণ ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ আক্রান্ত। এ বিষয়ে সরকারের অসতর্কতা এবং সঠিক সময়ে সীমান্ত বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতাকেই দুষছেন সবাই।
করোনার নতুন এ ধরনটি ভারতে ধরা পড়ার পর সে দেশটিতে ছড়িয়েছিলো আতংক। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছিলো অক্সিজেনের। আর শ্মশান না পেয়ে মাঠেই বানানো হয়েছিলো চিতা। নদীতেও ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিলো হাজারো লাশ। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের থাবায় ভারতের সেই ভয়াবহতা দেখেও বাংলাদেশের উদ্যোগ ছিলো ঢিলেঢালা। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশে বেনাপোলসহ সবগুলো সীমান্ত এলাকা সিল করে দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। তবে ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ ঠেকানো নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের টনক নড়ছিলো না। আর সে কারণেই যা হবার তাই হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে ২০০’র ও বেশি তরতাজা মানুষ। মৃতের সংখ্যা যেনো ২০০’র নিচে নামছেই না। কোথায় গিয়ে থামবে এই সংখ্যা, তা নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে।
করোনায় মৃতের সংখ্যা যে সময় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, ঠিক তেমনি সময়ে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে আগামী ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউন সম্পূর্ণ শিথিল করা হয়েছে। চলছে গণপরিবহন, দূরপাল¬ার বাস, ট্রেন, লঞ্চ, শপিংমল ও সব ধরনের দোকানপাট। আর ভার্চুয়ালি চলছে সরকারি অফিস-আদালত। অথচ কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন আরো কঠোর (কারফিউ আদলে) করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছিলো। তাদের এ পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ ছুটছে গ্রামে। কুরবানী ঈদ উদযাপন শেষে আবারো ছুটবে গন্তব্যে। তারা ‘করোনা ভাইরাস’ সঙ্গী করে নিয়ে গেছেন, নাকি বয়ে নিয়ে আসবেন, তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লকডাউন শিথিল করায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ভারতে করোনা’র নতুন ধরণ ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ ধরা পড়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশে বেনাপোলসহ সবগুলো সীমান্ত এলাকা বন্ধ এবয় কঠোর নজরদারী করতে না পারায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন সাবেক দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আফম রুহুল হক এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তারা বলেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করেনি সরকার। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ঠেকাতে উদ্যোগ ছিলো অপ্রতুল। ভারতের ভয়াবহতা দেখেও টনক নড়েনি স্বাস্থ্য বিভাগের।
সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমার বার্তাকে বলেন, ‘করোনার এই নতুন ধরন ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ ভয়াবহ এবং আতংকের নাম। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো ভারত, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যখন ভেঙে পড়েছিলো, তখনই বাংলাদেশকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। সঠিক কাজটি তখন করলে ভেরিয়েন্ট ঠেকানো সম্ভব হতো। সব মহল থেকে দাবি উঠেছিলো, দ্রুত সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার। কিন্তু সেসব দাবি স্বাস্থ্য বিভাগ বা সরকার আমলে নেয়নি। তখন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হলে এই অবস্থা হতো না।’
সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আফম রুহুল হক আমার বার্তাকে বলেন, ‘ভারতের ভয়াবহতা দেখে আমার সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। কেন দায়িত্বশীলরা উদাসীন ছিলেন, তা আমার বোধগম্য নয়। আমি বলবো, এখনও সময় আছে, আমাদের সচেতনতা দরকার। কঠোর পদক্ষেপ দরকার।’ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবনা আমলে নেয়ার তাগিদ দেন সাবেক এই মন্ত্রী।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ আমার বার্তাকে বলেন, ‘করোনার নতুন এই ধরণ ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’ কতটা ভয়াবহ, তা যারা অনুধাবন করতে পারছেন বা প্রত্যক্ষদর্শী, তারাই আতংকিত হচ্ছেন। এটাই স্বাভাবিক। কারণ এটা করোনার ভায়াবহ রুপ। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট এ আক্রান্ত হয়ে যারা ফিরে এসেছেন, তারা সম্পূর্ণ নতুন জীবন পেয়েছেন। কেন তখন সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হলো না, তা দায়িত্বশীলরা বলতে পারবেন। কেন কঠোর উদ্যোগ নেয়া হলো না, তা আমার বোধগম্য নয়।