হেলাল আকবর চৌধুরীর করোনা প্রতিরোধক বুথ হতে পারে দেশের রোল মডেল
সাকিব আহমেদ, স্টাফ রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১৫ আগস্ট ২০২১) : করোনা মহামারিতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চট্টগ্রমের আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের উদ্ভাবিত ‘করোনা প্রতিরোধক বুথ’ এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। চট্টগ্রাম পেরিয়ে রাজধানী ঢাকা হয়ে তাঁর এই উদ্যোগ আলো ছড়াচ্ছে দেশের ৬৪ জেলায়। সচেতনতা সৃষ্টির করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপিত হবে প্রতিটি উপজেলায়ও। তার এই উদ্যোগ হতে পারে দেশের রোল মডেল। হেলাল আকবর চৌধুরী করোনা মহামারি প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের উদ্ভাবিত এই করোনা প্রতিরোধক বুথ ৬ ফিট লম্বা এবং দেড় ফিট চওড়া। এর ভেতরে রাখা থাকছে ২ লিটার স্যানিটাইজার ও ৩শত মাস্ক। ভেতরে আছে ডাস্টবিন বক্স। যেখানে ব্যবহার করা মাস্ক রাখা যাবে। ব্যক্তি উদ্যোগের বাবরের আলো ছড়ানো এই বুথ চট্টগ্রামের সকল হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল, বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনসহ জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থাপনার সামনে বসানো হয়েছে। সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে স্থাপনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি জেলা শহরেও স্থাপিত হয়েছে হেলাল আকবর চৌধুরীর এই করোনা প্রতিরোধক বুথ।
হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর চট্টগ্রাম নন্দনকানন ইউনিট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, এনায়েত বাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সিটি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য (নানক-আজম) এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় পরিষদের উপ-অর্থ সম্পাদক (ফারুক-হারুন) পদে দায়িত্বরত ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি করোনার সময়ে বাবরের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র।
বিষয়টি নিয়ে উদ্ভাবক হেলাল আকবর চৌধুরী এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, করোনা প্রতিরোধক বুথ পিভিসি বোর্ডের মাধ্যমে তৈরি করা এটি এটিএম বুথের আদলে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটিএম বুথের আদলে করা এই করোনা প্রতিরোধক বুথ দেখলেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ যেন বুঝতে পারে এই বুথ থেকে বিনামূল্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সেবা পাওয়া যায়। এটি মানুষের মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং গণ-সচেতনতা বৃদ্ধির একটি কৌশল।
তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে এই করোনা প্রতিরোধক বুথ উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছি। যাতে জেলা-উপজেলায় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্ব-উদ্যোগে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে পারে। পাশাপাশি ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্পেন্টার মিস্ত্রি দিয়ে করোনা প্রতিরোধক বুথ প্রস্তুত করতে পারে। ইতোমধ্যে অনেক জেলাতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একটি করোনা প্রতিরোধক বুথ থেকে দৈনিক ৫০০ জন মানুষকে সেবা দিতে যে খরচ হবে, সেই খরচ কে বহন করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা-গ্রাম বা অলিগলিতে বসবাসরত একজন স্বাবলম্বী হৃদয়বান ব্যক্তি দৈনিক ৫০০ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে দৈনিক ৭৪০ টাকা খরচ করতে পারবেন। প্রতিদিন আমরা অপ্রয়োজনীয় অনেক খরচ করি। সেটা না করে এই অর্থ মানবসেবায় ব্যয় করা যায়। কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সংগঠন যদি এই বুথ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তবে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত হবেই।
তার মতে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সুরক্ষা সচেতনতা তৈরিতে যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে তারই আদলে যদি দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সুরক্ষা সচেতনতা নিশ্চিত করা যায়, তবে সুরক্ষার চাদরে আবদ্ধ করা যাবে পুরো দেশকে। দেশের সবকটি মার্কেটের মালিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন যৌথ উদ্যোগে সমিতির বিবিধ খরচের পাশাপাশি এই বুথগুলোর খরচ পরিচালনা করলে সুরক্ষিত হবে দেশ।
‘দেশের ৩০০ আসনের সংসদ সদস্যদের যদি নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় বিশেষ বরাদ্দ থাকে, তবে এই বুথ স্থাপনের কর্মসূচি হাতে নিয়ে নিজ সংসদীয় এলাকা করোনামুক্ত করা সম্ভব। যদি সরকারি বরাদ্দ না থাকে তবে নিজ উদ্যোগে এটা করলে বাংলাদেশ সুরক্ষা পাবে। যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা স্বনামধন্য কোম্পানি কিংবা রকমারি বিজ্ঞাপন প্রচারকারী সংস্থা নিজেদের বিজ্ঞাপন বাজেটে বিভিন্ন স্থানে বা নিজ এলাকা ও কর্মস্থলে বিজ্ঞাপনের আদলে এই বুথ পরিচালনা করলে মানুষ এটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে এবং করোনা ঠেকানো যাবে।
‘দেশের সব মসজিদ পরিচালনা পরিষদ নিজেদের ফান্ড থেকে এই বুথ পরিচালনা করে সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে। দেশের স্বনামধন্য ও সর্বস্তরের খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শো-রুম ও কারখানায় প্রবেশপথে এই বুথ পরিচালনা করলে মানুষ ও ক্রেতা উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। শহর-গ্রামে সবখানেই আবাসিক ভবনে মালিক ও ফ্ল্যাট পরিচালনায় কমিটি ও আলাদা ফান্ড আছে, যা থেকে করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপন করলে সব ভবন সুরক্ষা পাবে। যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের কমিটি যৌথ উদ্যোগে বাসস্ট্যান্ডে করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপনের মাধ্যমে করোনা থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে।’