বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে পুলিশ ও ডিবি প্রথম, দ্বিতীয় র্যাব
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে পুলিশ ও ডিবি প্রথম, দ্বিতীয় র্যাব
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১৩ মার্চ ২০২২) : ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৫৯১ জন। ছয় ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এসব ঘটনা সর্বাধিক ঘটিয়েছে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে র্যাব। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশের গুলিতেও নিহত হয়েছেন মানুষ। ৮টি জেলা বাদে গোটা বাংলাদেশেই সরকারি ভাষ্যমতে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে।
১৩ মার্চ (রোববার) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘নির্বিচার প্রাণনাশ? বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে ওয়েবিনারে জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সিজিএসের কয়েকজন গবেষক গবেষণায় অংশ নেন। আইনবহির্ভূত এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনুশীলনের গুরুতর পরিণতি বোঝার জন্য এই গবেষণাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য ওয়েবিনারে প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি জানান, ২০১৯-২০২১ পর্যন্ত তিন বছরের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এতে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঘটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর্যালোচনা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দুকযুদ্ধের ক্ষেত্রে পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্টতা আছে ২৩৫টি ঘটনায় এবং র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে ১৫৬টি ঘটনায়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদালতের সঠিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ৫১২, ক্রসফায়ার ৪, গোলাগুলি ১৫, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ১৫, গুলি করে হত্যা ৩৪ এবং নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। গুলি ছোড়া হলে প্রতিরোধের চেষ্টা হয়েছে বোঝাতে বন্দুকযুদ্ধ শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ৮৬ শতাংশ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হেফাজতে মৃত্যুর ১৭টি ঘটনা ঘটলেও গুলি করে হত্যা, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নির্বাচনের আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ে। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।