১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিডিআর বিদ্রোহের বিচার প্রক্রিয়া
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৫ ফেব্রুয়ারি) : পিলখানা ট্রাজেডির ১৪টি বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া। হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও বিষ্ফোরক মামলা এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে বিচারিক আদালতে। জানা যায়নি রক্তাক্ত বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যের কারণ। দীর্ঘ দিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। বিডিআর বিদ্রোহের চতুর্দশ বার্ষিকীতে নিহতদের সমাধীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান এবং নিহতদের স্বজনরা শ্রদ্ধা জানান।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা নারকীয় তা-ব চালায় পিলখানায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন। বিডিআর বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার কাজ শুরু করে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুইটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে।
অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮৩৪ জনকে। মামলাটি হত্যা মামলার সঙ্গে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিষ্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ১ হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৫৭ জন।
ঢাকার এক নম্বর মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে স্থাপিত আদালতে এ মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেন। গত এক বছরে ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে।
হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি প্রক্রিয়ায় আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্য। আসামিপক্ষের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক মামলাটির কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তিতে যথাযথ তৎপরতা নেই রাষ্ট্রপক্ষের। তাই বিচার শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষ বরাবরের মতোই দাবি করেছেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।
এই মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ গতকাল আমার বার্তাকে বলেন, ‘সাক্ষ্যগ্রহণের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা কাঙ্খিত পর্যায়ে নয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ২৭৮ জন আসামি হত্যা মামলায় খালাস পান। এছাড়া স্বল্পমেয়াদে সাজা ভোগ করে আরও ১৯০ আসামি মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। তাই এই ৪৬৮ জন আসামি মূল মামলায় খালাস বা সাজাভোগ করেও মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি বিষ্ফোরক মামলায় জামিন নামঞ্জুরের আদেশও আমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই জামিন আবেদন নিয়ে আমরা হাইকোর্টেও যেতে পারছি না। তাই আমরা চাই, এসব আসামিকে বিস্ফোরক মামলায় হয় জামিন দেওয়া হোক, অথবা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।
তবে আসামিপক্ষের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি আমার বার্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। আদালত খোলার পর রাষ্ট্রপক্ষে আমরা নিয়মিত সাক্ষী হাজির করছি। অভিযোগপত্রে ১ হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষী আছেন। সবার সাক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন তাদের জবানবন্দি নিয়েই বিচার শেষ করা হবে। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই এই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।’