দৈনন্দিন কাজে বোনাসের প্রস্তাব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের না
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৩ মার্চ ২০২৩) : বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) অফিসের দৈনন্দিন কাজের জন্য বোনাসের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে পিডিবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলো। মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি নাকচ করে বলেছে, দৈনন্দিন কাজের জন্য একটি সংস্থাকে বোনাস দেওয়ার প্রথা চালু করলে তখন সরকারের অন্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একই ধরনের দাবি আসতে পারে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে ্সব তথ্য জানা গেছে।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল। এই দলিলে বলা থাকে, পুরো এক অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে।
মূলত সরকারি কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়ানো, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে। সরকারের অনেক সংস্থাই প্রতিবছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভালো করে, তাদের ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়। তবে আর্থিক কোনো সংশ্লেষ থাকে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে পিডিবি জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় যেসব লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তারা তা অর্জন করতে পেরেছে। সে কারণে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে গ্রেড অনুযায়ী বোনাস হিসেবে এক মাসের মূল বেতন চেয়েছে।
‘রুটিন কাজে বোনাস কেন’ বিষ্ময় মন্ত্রণালয়ের : পিডিবির প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় বোনাস দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এপিএ অর্জনের জন্য অনেকগুলো কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার জন্য ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য প্রণোদনা হিসেবে বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকারি অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। তারা যেমন এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে, তেমনি সরকারের অন্য সংস্থাও এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। তখন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। এমন বাস্তবতায় এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাসের যে প্রস্তাবটি এসেছে, তা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় অপারগতা প্রকাশ করছে।
সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ফাওজুল কবির খান এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যেসব সূচক থাকে, সেগুলো অর্জন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ জন্য তাদের বোনাস দিতে হবে কেন? তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যে চুক্তি সই হয়, সেখানে কি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা থাকে? নিশ্চয়ই থাকে না। তাহলে পিডিবি কেন বোনাসের জন্য প্রস্তাব করে। তাকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। সেটি করতে না পারলে বরং শাস্তির প্রচলন করা যেতে পারে।