আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা, কিশোরীর মিথ্যা তথ্য মিললো ডাক্তারি পরীক্ষায়
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১৭ এপ্রিল ২০২৩) : টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে এক কিশোরী নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। তার দায়ের করা মামলার এজাহারে দেয়া তথ্যে বেশকিছু গড়মিল পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, এজাহারে উল্লেখ করা ধর্ষণের তারিখের আড়াই মাস আগেই ওই কিশোরী ছিলেন গর্ভবতী—যা উঠে এসেছে ডাক্তারি পরীক্ষায়। এছাড়াও মামলার বাদী কিশোরীর বড় ভাই জিয়াউল হাসান জনি জানিয়েছেন, তার মাদকাসক্ত বোন নানাভাবে উঠতি বয়সের ছেলেদের সাথে অবৈধ মেলামেশা করেন। এরপর তাদের ফাঁদে ফেলেন।
এদিকে, এ মামলা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে জেলাজুড়ে। তবে মামলার নেপথ্যে রয়েছে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’—এমনটাই দাবি ধর্ষণে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া মনির। তিনি দাবি করেছেন, এ মামলা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার ছোট ভাই বর্তমানে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য। আগামীতে সংসদ সদস্য হওয়ার জেরে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরোধী গোষ্ঠী।’
মামলার এজাহারে যা আছে :
মামলার এজাহারে ওই কিশোরী উল্লেখ করেন, তার ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে বড় মনির সাথে কথা হতো। এছাড়া, বড় মনি তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। জমির বিরোধের সমাধানের আশ্বাসে গত ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় বড় মনির নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলা ফ্লাটে যেতে বললে সেখানে যায় ওই কিশোরী।
এরপর তাকে শারিরীক সম্পর্কের প্রস্তাব দিলে রাজী না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে আটকে রাখেন। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ধর্ষণের কথা প্রকাশ করলে প্রাণ মেরে ফেলার হুমকি দেন বড় মনি। তারপর প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, এই ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। তবে ওই কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে তাকে আবার ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত কিবরিয়া।
মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারধর করেন। পরে দিবাগত রাত তিনটার ওই কিশোরীকে বাড়িতে রেখে আসা হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে ওই কিশোরী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
ডাক্তারি পরীক্ষায় যা উল্লেখ আছে :
মামলার এজাহার অনুযায়ী—ওই কিশোরী ৩ মাস আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে উল্লেখ থাকলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কিশোরী ২৪ সপ্তাহের (৬ মাস) অন্তঃসত্ত্বা। অর্থাৎ, মামলায় ধর্ষণের তারিখ উল্লেখ করার প্রায় আড়াই মাস আগে থেকেই ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
অন্যদিকে, মামলায় উল্লেখিত তারিখে বড় মনি টাঙ্গাইলের বাইরে ছিলেন বলে মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে।