২০০ টাকার টাইলস শ্রমিক থেকে যেভাবে কোটিপতি
জেলা প্রতিবেদক (বগুড়া), এবিসিনিউজবিডি, (১২ জুলাই ২০২৩) : আট বছর আগেও টাইলস মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সারা দিনে মজুরি মিলত ২০০ টাকা। টিনের ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করতেন। চড়তেন সস্তা বাইসাইকেলে। তবে এখন ভাগ্য খুলেছে তাঁর। শানশওকতের শেষ নেই। অর্ধকোটি টাকার পাকা দালানে থাকেন। চড়েন মোটরসাইকেলে। তবে নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই তাঁর। নেই ব্যবসা-বাণিজ্যও। চড়া সুদে টাকা খাটিয়ে মাত্র আট বছরের ব্যবধানে রীতিমতো কোটিপতি বনে গেছেন তিনি।
আট বছরে কোটিপতি বনে যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম গোলজার হোসেন (৪০)। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চকবেড়া গ্রামের বাসিন্দা। সুদের টাকা তুলতে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। সময়মতো টাকা না পেলে বাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়ে মানুষকে অত্যাচার–নির্যাতন করেন। গোলজারের সুদ চক্রের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। সহায়–সম্বল হারিয়ে ভিটাছাড়া অনেক পরিবার।
গোলজার হোসেন একসময় টাইলস মিস্ত্রির সহকারী ছিলেন। আট বছর আগে পুরোনো একটি বাইসাইকেল চালিয়ে বগুড়া শহরে কাজের সন্ধানে যেতেন। সারা দিন কাজ করে ফিরতেন সন্ধ্যায়। চড়া সুদের ব্যবসায় রাতারাতি ভাগ্য খুলে যায় তার।
সম্প্রতি সুদের টাকা পরিশোধকে কেন্দ্র করে এক গৃহবধূকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাঁশবাগানে বেঁধে নির্যাতন করেন গোলজার ও তার সহযোগীরা। পরে গৃহবধূর স্বজনেরা টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় স্ত্রীকে বেঁধে রেখে অপমান করায় ওই গৃহবধূর স্বামী লোকলজ্জায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুদ ব্যবসায়ী গোলজার হোসেনকে আটক করে গৃহবধূর করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। আদালতে তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।
টাইলস শ্রমিক থেকে সুদ ব্যবসায়ী :
সরেজমিনে গাবতলীর চকবেড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, নি¤œমধ্যবিত্ত কৃষক আকামদ্দিন প্রামাণিকের সন্তান গোলজার। শৈশব থেকে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। সাত ভাই–বোনের মধ্যে বড় ভাই শ্যালো ইঞ্জিন মেরামত করতেন। আরেক ভাই এখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। অন্য এক ভাই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সবার ছোট গোলজার একসময় টাইলস মিস্ত্রির সহকারী ছিলেন। আট বছর আগে পুরোনো একটি বাইসাইকেল চালিয়ে বগুড়া শহরে কাজের সন্ধানে যেতেন। সারা দিন কাজ করে ফিরতেন সন্ধ্যায়। চড়া সুদের ব্যবসায় রাতারাতি ভাগ্য খুলে যায় তাঁর।
গাবতলীর গোলাবাড়ি বাজার থেকে ইট বিছানো সড়ক ধরে কাতলাহার বিল। সেখান থেকে মেঠো পথ ধরে এগোলে মালেক বাজার। বাজার থেকে গলিপথ ধরে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়ে অজপাড়াগাঁয়ে দৃষ্টিনন্দন ভবন। সামনে বাগানবিলাস। ঘরে লাগানো হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)।