জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টা হরতাল
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্র, সরকারের জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও ইসলাম উৎখাতের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর হরতাল ডেকেছে জামায়াত। ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান মঙ্গলবার বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আজ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। আমরা মনে করি এ রায় ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিচারিক আদালত যেখানে মুত্যুদণ্ড দেননি সেখানে প্রথমবারের মত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তাছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারীর পরেও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থী।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীগণ সমাপণী বক্তব্যে বলেছিলেন, যে সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তার ভিত্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক আজ তাকে শুধু দোষী সাব্যস্তই করা হয়নি, মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।’ বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায় উল্লেখ করে কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে-এর বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ পিটিশন দায়ের করবো বলে জানান তিনি।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা ও দু’একজন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী বলে বেড়াচ্ছেন রিভিউ পিটিশনের কোনো সুযোগ নেই এবং কাদের মোল্লাকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝুলানোর কথাও বলছেন। তাদের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে কাদের মোল্লাকে তড়িঘড়ি করে হত্যার ষড়যন্ত্রই ফুটে উঠেছে।’
সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উৎখাতের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। ইসলাম বিরোধী নারী নীতিমালা প্রণয়ন, ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে মাদ্রাসা শিক্ষা সংকোচনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূলত সরকার ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্র করছে। সরকার দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী দলসমূহের উপর চরম জুলুম, নির্যাতন পরিচালনা করছে। সরকার গণগ্রেফতার, গণহত্যা ও অত্যাচার-নিপীড়নের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কয়েকদিন যাবৎ ইসলামী আদর্শ বিরোধী নানামুখি বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সরকার জামায়াতে ইসলামীর উপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কূটকৌশল অবলম্বন করেছে।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকা। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, আর বাস্তবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশালী শাসন চাপিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো চক্রান্ত দেশের জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না।’
এ অবস্থায় সরকারের জুলুম, নির্যাতন, ‘নিপীড়ন, গণহত্যা, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ও আব্দুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমি আগামী ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
এ কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, ওলামায়ে-কেরাম, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’ তবে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।