প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২ ঘণ্টা ছিলাম, উনি কিছু জিজ্ঞেস করেননি : বাণিজ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৩০ আগস্ট) : বাজারে সিন্ডিকেট আছে কিন্তু আমরা হাত দিতে পারি না– বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাকে আমি ধরব।’
৩০ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার্সের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, কী মিন (বোঝাতে) করেছেন সেটা তিনি ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, ভাঙা হবে বা হবে না–এ ধরনের কোনো কথা আমি কোথাও বলিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘণ্টা ছিলাম, আমেরিকান চেম্বার্সের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি, উনিও কিছু জিজ্ঞেস করেননি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমি বলেছিলাম, প্রয়োজনে সরবরাহ ঠিক রাখতে ডিম আমদানি করা হবে। সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি সব সময়।
‘তাহলে কি বলছেন সিন্ডিকেট বলতে কোনো কিছু নেই বাজারে’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের একটি বিশাল অর্থ বিশাল ব্যাপার। ডিম নিয়ে দেখেন, গ্রামে গ্রামে লাখ লাখ ডিম উৎপাদন হয়। সেখানে সিন্ডিকেটের কথা বলব কেমন করে। একজন দুজন তো ডিমের ব্যবসা করছে না। এই যে বিশাল জায়গায় দাম বাড়াচ্ছে তারা। সেটা তো বুঝতে পারি। সব জায়গায় তো সিন্ডিকেটের কথা বলতে পারি না। কিন্তু সুযোগ যে তারা নেয় না তা বলি না। আমরাও চেষ্টা করি যে দামটা হওয়া উচিত, সেটার কথা চিন্তা করি।
কোনোভাবেই তো বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, আজ একটা বাড়লে কাল আরেকটার দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, ভারতের বাজার আর আমাদের বাজারের তারতম্য অনেক– এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ভারতের সঙ্গে সব বিষয়ে তুলনা করা সম্ভব নয়। আজ ভারতে চিনির দাম কম, কারণ তাদের উৎপাদন যেটা হয় চাহিদা মেটানোর পরও রপ্তানি করে। আর আমাদের ৯৯.৯ শতাংশ বাইরে থেকে আনতে হয়। সব জিনিস একরকম হবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো কোনো কোনো জিনিস একরকম হয়। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল, তখন ভারতে রেশনিং চালু করেছিল। যখন কাঁচা মরিচের দাম বাড়ল তখন ৩৫০ রূপিতে বিক্রি হয়েছে। এই মুহূর্তে দেখেন পেঁয়াজের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা তাদের অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে কাজ করে। আমরা বিকল্প সোর্স থেকে আনার চেষ্টা করি। সব কিছু একরকম নয়। তবে হেবিটটা একরকম পাশাপাশি দেশ বলে।
শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি অনেকটা এগিয়েছে, আমরা সে তুলনায় পিছিয়ে আছি– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা আর আমাদের অবস্থাটা ভিন্ন। শ্রীলঙ্কার বড় যে আয় সেটা হলো পর্যটন খাত। সেটা তারা রিভাইভ করেছে বলে তারা উন্নতি করছে। পাশাপাশি ছোট দেশ, সেজন্য তারা উতরে গেছে। আমাদের তো বিশাল বড় একটা দেশ। আমাদের চেষ্টা চলছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের একটু কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে।
ডিমের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সেদিনও বলেছি, ডিমের কী দাম হওয়া উচিত সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করবে না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দাম নিদিষ্ট করে দিয়েছে, এরকম দাম হওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি তারা যে দামটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেটা যেন বাজারে থাকে।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, গ্লোবাল অবস্থাটা দেখেন। ইংল্যান্ডের দোকানেও তিনটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না বলা হয়, সে বিষয়ে রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেয়। জার্মানিও দোকানগুলোতে তেলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। আমাদের এখানেও নিশ্চয়ই প্রভাব পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হবে তেমন তো নয়, তবে আমাদের চেষ্টা চলছে। গ্লোবাল এই দুরবস্থার মধ্যেও যেন আমরা ঠিক থাকতে পারি।