জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে গুমের ঘটনা তদন্ত করুন : এইচআরডব্লিউর
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৩০ আগস্ট) : বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশনকে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব সরকারের গ্রহণ করা উচিত। আজ বুধবার ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে এই আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই আহ্বান সংগঠনটির ওয়েবসাইটে ২৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) প্রকাশ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা দেশটির কর্তৃপক্ষ বারবার অস্বীকার করে আসছে। উল্টো তারা প্রহসনমূলক দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলে আসছে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা আত্মগোপনে আছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশি মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০-এর বেশি ব্যক্তিকে গুম করেছে। যদিও পরে কিছু লোককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, আদালতে হাজির করা হয়েছিল বা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলিবিনিময়ে মারা গেছেন বলে বলা হয়েছিল। তবে এখনো প্রায় ১০০ ব্যক্তি নিখোঁজ। আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ পদ্ধতি গড়ে তুলতে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, গুমের বাস্তবতা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ শুধু তামাশা করছে না, উল্টো তারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কষ্টকে দীর্ঘায়িত করছে। এই পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনের অবস্থান জানতে মরিয়া হয়ে আছে।
জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, এই অন্যায়ের সুরাহায় বাংলাদেশ সরকার যে সত্যিই অঙ্গীকারবদ্ধ, তা প্রমাণে গুমের ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন চালুর বিষয়ে তাদের জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে, আদিবা ইসলামের (১২) বাবা পারভেজ হোসেন। তিনি বিএনপির একজন কর্মী। তিনি ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর গুমের শিকার হন। তখন আদিবার বয়স ছিল ২ বছর। আদিবা সাম্প্রতিক এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলে, একদিন তার বাবা তার কাছে ফিরে আসবেন, আর তিনি তাকে অন্যদের মতোই আলিঙ্গন করবেন—এই আশা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে অপেক্ষা করা যে কতটা বেদনাদায়ক, তা সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। কিন্তু ১০ বছর হয়ে গেছে, তার অপেক্ষার শেষ নেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, পারভেজ ও অন্য তিন বিএনপিকর্মী বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে একটি পার্কে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন একটি সাদা রঙের গাড়ি এসে তাঁদের টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। চারজনকে তুলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই এক পরিচিত ব্যক্তি জানান, তিনি তাঁদের গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে সংস্থাটির কার্যালয়ে দেখেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পারভেজকে আটক করার খবর অস্বীকার করে। আরও বেশ কিছু মানুষের মতো পারভেজের হদিস অজানা রয়ে গেছে।