বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে মানুষের ঢল
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১ সেপ্টেম্বর ২০২৩) : বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় বর্ণাঢ্য র্যালি করছে দলটি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র্যালি শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল মোড়, নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্বর ও ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই র্যালি করা হয়। শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
এ সময় বিএনপির নেতারা নেতারা বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে বিএনপি। আর সেই আন্দোলনে গণতন্ত্রকামী বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে।
নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সরজমিনে দেখা গেছে, বেলা ২টায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসেন। পরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তারা। র্যালিতে নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙ বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেস্টুনসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়েও মিছিলে শরীক হন অনেক নেতা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়ও বাড়ে। উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাজির হন দলে দলে। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন সেøাগানে র্যালি প্রাঙ্গণ মুখরিত করেন তুলেন তারা।
র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং সঞ্চালনা করেন উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ সময় বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, কোনো স্বৈরাচার জুলুম করে টিকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। তিনি বলেন, সরকার বলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকি একজন সৈনিক ছিলেন। কিন্তু তিনি এ দেশের মানুষের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে দিয়েছিলেন। অথচ এ সরকার দেশের গণতন্ত্র, দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে শেষ করে দিয়েছে। তারা দাবি করে ‘তারা নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে, সেটা দেশের মানুষ ভালো করে জানে।’ আমি একটা কথা বলতে চাই, কোনো স্বৈরাচার জুলুম করে টিকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। আটকাতে পারবে না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশেকে সমৃদ্ধির জন্য বিএনপি গঠন করেছিলেন। দেশেকে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। আজ তাদের অসম্মান করা হয়। জিয়াউর রহমান নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মুক্ত করেছি, এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব, এবারও বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
প্রধান বিচারপতির বিদায় কালের কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘হস্তক্ষেপ মুক্ত না হলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।’ এ কথা কি ওনার আসার সময় মনে ছিল না? যাওয়ার সময় মনে হয়েছে। এখন বলে লাভ কী হবে? প্রত্যেকটি অপকর্মের বিচার হবে এই দেশে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে বিএনপি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে বিদেশিদের কাছে না হলেও দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে সরকারকে মাথা নত করতেই হবে। ১৮ কোটি মানুষের কাছে এ সরকারের সমর্থন নেই। সরকার বিদেশিদের কাছে মাথা নত করলো কি করলো না, এ নিয়ে বিএনপির মাথা ব্যথা নেই।
বিদেশিদের বিএনপির পক্ষে সমর্থন প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নে গয়েশ্বর বলেন, তাদের (বিদেশিদের) সমর্থন আদায় আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি, তারা (বিদেশিরা) গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, তারাও এদেশে জাস্টিস চায়, জনগণের অধিকার যেন ভূলুণ্ঠিত না হয় সেটা তারাও চায়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে, খুন-গুমের বিরুদ্ধে বলে। সুতরাং আমাদের এখানে বিদেশিদের কাছে চাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। তারা তাদের নিজস্ব বিবেচনাবোধ থেকে আমাদের দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলছে, ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলছে। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দায়িত্ববোধ থেকে বলছে। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার, বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার এবং মানুষের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই বিএনপির প্রতিশ্রুতি। সে অনুযায়ী আমরা রাজপথে লড়ছি। দেশে গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত লড়বো। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার বিকল্প নেই। আমরা শুধু নই, আজ দেশের ১৮ কোটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং কোনো রাজনৈতিক দল পরাজিত হলেও জনগণ কখনো পরাজিত হয় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে কোনো শত্রু শিবিরে বন্দি ছিলেন না, আত্মসমর্পণ করেননি। সম্মুখ লড়াই করে, নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকার এখন উল্টাপাল্টা বলতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দিচ্ছে। অথচ এই ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করেছেন। আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি জায়গায় চোরে ভর্তি। সরকারের আশপাশের মন্ত্রী-এমপিরা এই চুরি-লুটপাটে জড়িত। এই সরকার আজকে অন্তিম অবস্থায়। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আর কিছু করার নেই। দেশে-বিদেশে ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে তারা। তিনি বলেন, এই সরকার ক্রসফায়ারের মাধ্যমে জনির মতো আমাদের অনেক তরুণ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ব্যাংক লুট করেছে, রিজার্ভ চুরি করেছে- কোনোটাই বাদ রাখেনি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ সব অপকর্মই করেছে। শুধু তাই না, মহিলা লীগের একজন নেত্রী মানিকগঞ্জে গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
রিজভী বলেন, ৪৫ বছর পার করেছে বিএনপি। সরকারের এত নির্যাতন, এত অত্যাচার সহ্য করেও এক দিনের ঘোষণায় আজকে এখানে যে জনতার ঢেউ নেমেছে এগুলো অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি দেখবেন? আজকে ছাত্রলীগের একটি সমাবেশ আছে সারা দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) লোক এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী এখন পুষ্টিবিজ্ঞানী হয়েছেন। উনি বলেছেন, ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রাখতে, উনি কাঁচামরিচ শুকিয়ে ফ্রিজে রেখে পরে খেতে বলেছেন। উনি গোশতের বার্গার খেতে নিষেধ করেছেন। উনি বলেছেন, কাঁঠালের বার্গার খেতে। উনি আরও বলেছেন, বেগুনের বেগুনি খাবেন না, মিষ্টি কুমড়ার বেগুনি খাবেন। তাহলে সব পাস করা পুষ্টিবিজ্ঞানী এখন রিটায়ার্ডে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা এখন পুষ্টিবিজ্ঞানী হয়েছেন। কারণ, উনার কোনো বৈধতা নেই। তাই তিনি আবোল-তাবোল মেন্যু দিচ্ছেন খাওয়ার জন্য।
এসময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, রফিকুল ইসলাম, ওবায়দুল ইসলাম, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, কাজী আবুল বাশার, রফিক শিকদার, ঢাকা মহানগর বিএনপির আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।