কাদের মোল্লাকে রায় শোনানো হয়নি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের অনুলিপি পেলে তা অন্তরীণ আব্দুল কাদের মোল্লাকে দেখানো হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে তিন বছর ধরে থাকা এই জামায়াত নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়। জামায়াত নেতা যে কক্ষে রয়েছেন, সেখানে টেলিভিশন না থাকায় তিনি রায় শোনেননি বলে কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রায়ের পর উপমহা কারাপরিদর্শক গোলাম হায়দার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “রায়ের কপি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কাদের মোল্লাকে জানানো হবে। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি না, জানতে চাওয়া হবে।”
কাশিমপুর কারাগারের ইউনিট-২ এ কাদের মোল্লা রয়েছেন। ওই কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবির বিকালে এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “কক্ষে টেলিভিশন না থাকায় কাদের মোল্লা এখনো ফাঁসির রায় শোনেননি।
“ফাঁসির আদেশের কপি পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এরই মধ্যে কাদের মোল্লার জন্য কনডেম সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দিকে জানানোর মাধ্যমে কনডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হবে।”
কাদের মোল্লাকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে কারাগারে মালীর কাজ করতেন।
যাবজ্জীবন রায়ের আগে তিনি ওই কারাগারের সুরমা ভবনে বিশেষ বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। সেখানে টিভি ও পত্রিকা পতেন তিনি। কিন্তু যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর তার ওই সব সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রী সানোয়ার জাহান, ছেলে হাসান মওদুদ, নাতি নাইমা আক্তার, ভাতিজা নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন আত্মীয় তার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা করেন।
একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিত কাদের মোল্লাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সেদিন আদালত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাদের মোল্লার দেখানো ‘ভি’ বা বিজয় চিহ্ন খবরে প্রকাশিত হওয়ার পর রাজধানীর তরুণরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিরল এক সমাবেশের সৃষ্টি করে।
দেশ-বিদেশে বাংলা বসন্ত নামে পরিচিত পাওয়া সর্বস্তরের মানুষের অভূতপূর্ব এই অহিংস সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার দাবি ওঠে।
দাবির মুখে আইন সংশোধনের পর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ আপিল করে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কাদের মোল্লাও।
ওই আপিল শুনানির পর মঙ্গলবার আপিল বিভাগ প্রসিকিউশনের আপিল আবেদন গ্রহণ করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, আপিলের রায়ের পর এই নিয়ে ‘রিভিউ’ আবেদন করার কোনো সুযোগ আইন অনুযায়ী নেই। শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাইতে পারেন কাদের মোল্লা।
কারা কর্মকর্তা হায়দার বলেন, “তিনি যদি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন, তা হলে সেই আবেদন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
আর ক্ষমার আবেদন না করলে বা রাষ্ট্রপতির কাছে করা আবেদন নাকচ হলে আদালতের রায় বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে দ্রুতই রায় কার্যকর করা হবে।
ক্ষমার আবেদন না করলে অথবা আবেদন নাকচ হলে আইন অনুযায়ী ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।