দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী
বাসস : বাঙালি জাতির ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান জানাই, জাতির ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
১০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দুপুরে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া রেলস্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’
২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি—এ–ই আমরা গড়ে তুলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এ দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোয়া তুলে আমাদের প্রতিদিন ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনো দিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোট ৩০০ আসনে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার পর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট আর নির্বাচন নিয়ে খেলা, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা—এই ধ্বংসযজ্ঞেই মেতে আছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ উচ্চারণ ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের পর আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে তা করে দেখিয়েছি। আবারও প্রমাণ করেছি, বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার জন্য বিশ্বব্যাংক তাঁর পক্ষে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।’
‘পদ্মা নদী রেলে করে পাড়ি দেওয়া, আজকে দিনকে সেই স্বপ্নপূরণের দিন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চলমান বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে দেশের সব অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এরই মধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ভূমি ও গৃহ দিয়েছে। সব জেলা–উপজেলায় মডেল মসজিদ করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি। আড়াই কোটি শিক্ষার্থী বৃত্তি, উপবৃত্তি পাচ্ছে। যাতে দেশটা এগিয়ে যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ল্যাব করে দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা দিচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষিত করেছি। ব্রডব্যান্ড–সুবিধা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ায় তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘরে বসে দেশ–বিদেশের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।’