গ্যাসের ধোঁয়ায় মঞ্চ ছাড়েন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, সিনিয়র প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৮ অক্টোবর ২০২৩) : পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দের মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় নেতারা। কাঁদানে গ্যাসের কারণে সমাবেশস্থলে কারও পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। এতে সমাবেশ প- হয়ে যায়। ২৮ অক্টোবর শনিবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এর আগে বেলা দুইটার দিকে মহাসমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও উসকানিতে পা দেবেন না, দয়া করে বসে যান। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাৎ করতে চায় তারা (সরকার)।’
মির্জা ফখরুল যখন এ আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন কাকরাইলের দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া আসছিল। তবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এ সময় মঞ্চ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দু-একটা পটকায় ভয় পাবেন না। গুলি হলে হবে।’
এরপর বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তাঁর বক্তব্যের শেষ দিকে এসে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেলা আড়াইটা। এর আগে বক্তব্যে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ জনসভায় গোলাগুলি করছে তারা।
আমীর খসরুর বক্তব্যের সময়ও বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাকরাইলের দিক থেকে এই শব্দ যখন আসছিল, তখনো মহাসমাবেশস্থলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসর ধোঁয়া বিএনপির মঞ্চের দিকে আসতে থাকে। বেলা পৌনে তিনটায় একটি ভ্যানে করে রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে বিএনপির মঞ্চের সামনে আনা হয়। তখন উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়, আমিনুল হক, ইশরাক হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে কাকরাইলের দিকে যেতে থাকেন। তখন সমাবেশস্থলেও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
দুপুরের পর পর বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে নয়াপল্টনের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারা এখন বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। ফলে সংঘর্ষও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। সুযোগ পেলেই গলি থেকে বের হয়ে ঢিল ছুড়তে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা ধাওয়া দেয় পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন, মালিবাগ ও রমনা পার্ক এলাকার মূল সড়কে হাজারো পুলিশ, র্যাব, ডিবি সদস্য অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন এলাকার গলিতে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী অবস্থান নেয়।
এদিকে পুলিশের কড়াকড়িতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। মূল সড়কে আসতে চাইলেই ধাওয়া করা হয়। কেউ জরুরি প্রয়োজন দেখালেও তাদের সড়কে আসতে দেয়া হয়নি।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশি বাধার মুখে বিএনপির নয়াপল্টনের সমাবেশ প- হয়ে যায়। ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নয়াপল্টন এবং রাজধানীর অন্যান্য স্থানে বিএনপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় বিএনপির বহু নেতাকর্মীর পাশাপাশি পুলিশ ও সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন। পুলিশ দাবি করেছে, তাদের ৪১ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিএনপি। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত ছিল। বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা হিসেবে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে সেই সমাবেশ বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়।