সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র ‘বৈধ-বাতিল’ আলোচনায়
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৪ ডিসেম্বর) : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চলছে মনোনয়নপত্র বাছাই। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে বাছাইয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এ ‘বাছাই পর্ব’ নানা কারণেই আলোচনায় এসেছে। শুধু আলোচনায় বললে ভুল হবে, টক অব দ্যা কান্ট্রি বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। ‘মনোনয়নপত্র বাছাই’য়ে বাতিল হয়ে যাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্যসহ একাধিক প্রার্থী এমনটাই মনে করছেন। তারা বলছেন, সরকারের নেতৃত্বাধীন ‘দল’ চাইলেই ‘বৈধ’, না চাইলেই ‘বাতিল’! বিষয়টি নিয়ে শতাধিক প্রার্থী ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, অকারণে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে না।
গতকাল রোববার (৩ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনসহ ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই আসনে বৈধ হয়েছে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবেন তিনি। একই দিনে ঋণখেলাপির অভিযোগে কক্সবাজার-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই আসনে বৈধ হয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র। তিনিও নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
ঋণখেলাপির অভিযোগ বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে গতকাল। আর এক ঋণখেলাপির ঋণের জামিনদার হওয়ার অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে একই দলের সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র। মানিকগঞ্জে জাতীয় পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সাবেক এমপি আউয়ালের মনোয়নপত্র স্থগিতসহ ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর আসনে (সদর-বিজয়নগর) এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল সারা দেশে প্রায় দুই শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
ঝালকাঠি-১ আসন : ঝালকাঠি-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনসহ ছয়জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে এ আসনে তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ছয়জনের মনোনয়ন বাতিল করেন। মনোনয়ন বাতিল হওয়া অন্য প্রার্থীরা হলেন- স্বতন্ত্রপ্রার্থী মনিরুজ্জামান, মোহাম্মাদ ইসমাইল, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, নুরে আলম, মজিবুর রহমান মৃধা ও জাতীয় পার্টির এজাজুল হক। জেলা প্রশাসক জানান, দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের সমর্থনকারী ভোটার তালিকায় দেয়া তথ্যের সত্যতা না পাওয়ায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হলেও সেটি পরিবর্তন করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়।
কক্সবাজার-১ আসন : ঋণখেলাপি হওয়ায় কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এখানে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন ১৩ জন। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলে। সেখানে কক্সবাজার-১ আসনে ১৩ প্রার্থীর মধ্যে আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের জাফর আলম। তিনি ও তার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের দুজনের মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ-১ আসন : মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১১ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। গতকাল রোববার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু জাফর রিপন এ ঘোষণা দেন। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বাকি দুজন হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী মুহাম্মদ ফরিদ হোসেন ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবির।