অপরিচিত নারীকে বাঁচাতে জীবন দিলেন গাইবান্ধার এক তরুণ

জেলা প্রতিবেদক (গাইবান্ধা), এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৩ এপ্রিল ২০২৪) : অপরিচিত এক নারীকে বাঁচাতে জীবন দিলেন গাইবান্ধার তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী জোবায়ের। ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ এক নারীকে শিশুসন্তান কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে দেখে সে ট্রেনের সামনে গিয়ে তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করেন। এসময় তিনজনই ট্রেনের ধাক্কা খান। এতে শিশুসন্তান বেঁচে গেলেও ওই নারী ও জোবায়েরের মৃত্যু হয়। ১ এপ্রিল সোমবার গাইবান্ধার সদরে এ ঘটনা ঘটে।

২ এপ্রিল সকালে কাঁদতে কাঁদতে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জোবায়ের আমাদের একমাত্র ছেলে ছিল। তাকে নিয়েই আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সব স্বপ্ন। সে একদিন ভালো চাকরি করবে, সংসারের অভাব-অনটন ঘুচবে। আমরা সুখে থাকব। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আমরা এখন কাকে নিয়ে বাঁচব?’

নিহত জোবায়ের ফুলছড়ির একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এরপর সদর উপজেলার উত্তর হরিণসিংহা এলাকার এসকেএস স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে একই কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন।

স্বজনেরা জানান, জোবায়ের শহরের থানাপাড়ার একটি মেসে থেকে লেখাপড়া করতেন। গতকাল রেললাইনের পাশ দিয়ে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ওই নারীকে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখে তিনি বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ভরতখালী গ্রাম। গতকাল রাতে পারিবারিক কবরস্থানে জোবায়েরের দাফন সম্পন্ন হয়। আজ সকালে ভরতখালী গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীকে মাতম করতে দেখা যায়। বাড়ির আঙিনায় নির্বাক বসে আছেন জোবায়েরের মা, বাবা ও বোন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

মা জেবা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রোজার কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে গেছে। এর পর থেকে সে মেসে ছিল। আগামী বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার কথা। বাড়ি আসার পর সে ঈদের কেনাকাটা করতে চেয়েছিল। তার সেই আশা আর পূরণ হলো না। আমরা কাকে নিয়ে ঈদ করব? কত স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ