প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

আনোয়ার আজমী, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৩ এপ্রিল ২০২৪) : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠিতে আরজি জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির স্বপ্ন ও পলিসি বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি।

২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় দুই দফায় বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেড় হাজার শব্দের দীর্ঘ এই চিঠি পাঠ করে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি জানান।

গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ নেতাকর্মীদের বুয়েট ক্যাম্পাসে জনসমাগম করাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ১ এপ্রিল সোমবার নাটকীয়ভাবে মোড় নেয় ঘটনা, ছাত্রলীগের সদস্য বুয়েট ছাত্র ইমতিয়াজ রাব্বির রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতির নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাইকোর্ট। আর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফেরাতে একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ।

তবে বুয়েট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোর্টে যাবে বুয়েট। প্রথাগত ছাত্ররাজনীতি চালু হবে না। তবে বুয়েট ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইউকসু)’ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সেদিকে তারা এগোবেন।

চিঠিতে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, আমাদের অনুরোধ, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন, ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিগগিরই।

শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, বুয়েট করোনা, ‘পদ্মা সেতুসহ নানাভাবে দেশের জন্য অবদান রেখে চলেছে। অপেক্ষাকৃত কম অর্থে তারা আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনছেন।’

তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না, আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।

ছাত্ররাজনীতির কারণে সাবেকুন্নাহার সনি, আরিফ রায়হান দ্বিপ সবশেষ আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে তারা উল্লেখ করেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। এ ছাড়াও অসংখ্য শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের অমানুষিক নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা বুয়েটের র‌্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।

তারা আরও উল্লেখ করেন, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারা দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ব্যতীতও গত কয়েক বছরে সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিল।

তারা আরও বলেন, ছাত্ররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনেপ্রাণে ধারণ করে। দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা জোগায়। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর।

আন্দোলনকারীরা আরও উল্লেখ করেন, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চায় না। আমাদের ভিসি এবং আমাদের সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি, তারা তাদের সন্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে অনুরোধ আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, আমরা জানি, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।

শিক্ষার্থীরা খোলা চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তা বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়। আমাদের এই পথচলা আপনিই (প্রধানমন্ত্রী) নির্বিঘœ রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা, আপনার হাজারো সন্তান আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ