রমজান, কেনাকাটা ও ঈদযাত্রা নির্বিগ্ন, প্রশংসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মেহ্দী আজাদ মাসুম
মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কঠোর দায়িত্বে পালনে প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ঈদের আগে রমজান পালন, ঈদের কেনাকাটা ও পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপনে গ্রামের পথে ছুটে চলায় বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্বিগ্ন হয়েছে। কথা রেখেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। তিনি রমজানের আগেই রাজধানীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুরো মাস জুড়েই রাজধানী ছিলো কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে।

অতিতের অনেক সময়ের চেয়ে এবার পুরো রমজানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিলো রাজধানী। রমজান শুরুর আগে এমন ঘোষণাও ছিলো ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানের। পুলিশের চৌকশ এই কর্মকর্তা ডিএমপির দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি কথা রেখেছেন রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় দেয়া অঙ্গীকারের। রমজানে মুসল্লিরা রোজা পালন করেছেন ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যতার মধ্য দিয়ে। ঈদকে সামনে রেখে কেনা-কাটা করেছেন নির্বিগ্নে। ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন আনন্দ আর উদ্দীপনায়। কোথাও ছিলো না ভয়-ভীতি, অসন্তোষ, ছিলো না অতৃপ্ততা। এক কথায় অনন্য।

এবারের পবিত্র রমজান মাসে ও ঈদের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। দেশজুড়ে সতর্ক অবস্থার পাশাপাশি তাদের মোতায়েন করা হয় টহলে ও তল্লাশিতে।

রাজধানী ঢাকাতেই তিন স্তরের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ সহস্রাধিক সদস্য। এবারের রমজানে মাসব্যাপী জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ও ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলঅ বাহিনী। রাজধানীর সবকটি বিপণিবিতান ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা, বড় মার্কেটগুলোর প্রবেশমুখে আর্চওয়ে লাগানো, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে ক্রেতাদের মার্কেটে ঢোকানোয় ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা পালিত হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষজন নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘেœ পবিত্র রমজান পালন, রমজান মাসের কেনাকাটা ও ঈদ উৎসব পালন করতে পারেন, সেজন্য রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তিন ধাপে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের কাছে রমজান ও ঈদের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদপরবর্তী সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয় রাজধানী ঢাকা মহানগরীর আট ডিভিশনের ৪৯ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদেরও। এবারের রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে; যাতে নাশকতা, নৈরাজ্য, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, প্রতারণা ও যানজটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে কঠোরভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। পবিত্র মাহে রমজান মাস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নৌযান ও রেল চলাচল এবং যাত্রীসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়। ডিএমপি কমিশনার মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য মার্কেট মালিক সমিতিকে সিসিটিভি, আর্চওয়ে, এক্সেস কন্ট্রোল মেশিনসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ