তিন দেশে শিশু পর্নো ভিডিও বিক্রি করতো টিপু কিবরিয়া

মনির হোসেন মিন্টু, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২৬ এপ্রিল ২০২৪) : ‘ছেলেশিশুদের দিয়ে টিপু কিবরিয়ার তৈরি করা পর্নো ভিডিওর গ্রাহকদের মধ্যে বিদেশিদের তালিকায় আছে ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু মানুষ। তাদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ভিডিও তৈরি করতেন। এসব ভিডিওতে যাদের ব্যবহার করা হতো, তাদের অধিকাংশই রাজধানীর গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর রেলস্টেশনের ছিন্নমূল শিশু। তাদের কারও বয়সই ১২ বছরের বেশি নয়। তাদের দেয়া হতো ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এই শিশুদের জোগাড় করে দিতেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা।’ পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিমান্ডে থাকা টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া ও তার প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেড়িয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টিপু কিবরিয়ার চার সহযোগীর নাম ও ছবি পাওয়া গেছে। তারা পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী। তারাই তৃণমূল পর্যায়ের ছেলেশিশু এবং ঢাকার পথশিশুদের জোগাড় করে টিপু কিবরিয়ার কাছে নিয়ে যেতেন।

সম্প্রতি টিপু কিবরিয়ার পর্নো ভিডিওর বিষয়টি অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের নজরে এলে তারা বাংলাদেশ পুলিশকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায়। সেই চিঠির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি দল গত ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। ২৪ এপ্রিল বুধবার আদালত তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিএমপির সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহমেদুল ইসলাম এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, শিশু সাহিত্যচর্চার আড়ালে ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করা শুরু করেন টিপু কিবরিয়া ও তার প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলাম। এসব শিশুর মধ্যে ২০-২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের একজন আজ সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এক সময়কার শিশু-সাহিত্যিক টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯১ সালে একটি প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদুল ইসলাম বলেন, টিপু কিবরিয়া অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলো বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এগুলো দেখে ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু মানুষসহ অনেকে টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তারা আরও চাহিদা দিতেন। এসব ভিডিও তিনি একাধিক এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পাঠাতেন। মাত্র তিনটি কনটেন্ট বিক্রি করে এক হাজার ডলার নিয়েছেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, টিপু কিবরিয়ার চার সহযোগীর নাম ও ছবি পাওয়া গেছে। তারা পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী। তারাই তৃণমূল পর্যায়ের ছেলে-শিশু এবং ঢাকার পথশিশুদের জোগাড় করে টিপু কিবরিয়ার কাছে নিয়ে যেতেন। টিপু কিবরিয়া নিজের ক্যামেরায় পথশিশুদের আপত্তিকর ছবি তুলতেন এবং ভিডিও করতেন। এসব ভিডিও নিজেই এডিটিং করতেন। তার বাসাতেই ছিল ভিডিও এডিটিং প্যানেল।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ