‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল পাকিস্তান শাসনামলে’

রংপুর ব্যুরো, এবিসিনিউজবিডি, রংপুর (২ আগস্ট ২০২৪) : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ছাত্র আবু সাঈদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল পাকিস্তান শাসনামলে।

২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে রংপুর মহানগরীর পার্ক মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এসব দাবি জানান শিক্ষকরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও পদযাত্রার ব্যানার নিয়ে একত্রিত হন। এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ দেশের সকল হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার, আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া সব শিক্ষার্থীর মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এ সময় সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে সহিংস হলো? আমরা তো শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি তুলে ধরেছিলাম। সরকারে থাকা দায়িত্বশীলদের মদদে আমাদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশ সদস্যরা হামলা করে, মারধর করে, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। তারাই আমাদের ওপর গুলি চালায়। আমাদের ভাইকে কেন হত্যা করা হয়েছে, কী কারণে ছাত্রদের হত্যা করা হলো?’

এ সময় আবু সাঈদসহ সারা দেশে চলমান এই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

এদিকে সংহতি প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, ‘আমাদের ছাত্র আবু সাঈদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা আর কোনো হত্যাকা- দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আনার জন্য সরকারকে সকল ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে। আমরা শিক্ষকরা সব সময় ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত ছিলাম, তাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি।’

অভিভাবকরা বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। অনেকে হত্যার শিকার হয়েছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে-বাড়িতে কাতরাচ্ছে। অনেকে আতঙ্কে দিনানিপাত করছে। আমরা অভিভাবক হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমরাও তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।’

সমাবেশ শেষে পার্ক মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। এ কর্মসূচি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকা-ের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানানো হয়।

অবস্থান কর্মসূচির আগে শিক্ষকরা একটি মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে এসে শেষ হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক অংশ নেন।

সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মতিউর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, একই বিভাগের শিক্ষক ফারজানা জান্নাত তুশি প্রমুখ।

বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা আরও দেখলাম আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে রাতারাতি পুলিশ তাকে রাতের মধ্যেই দাফন করার জন্য উঠেপড়ে লাগল। এমনকি পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা লাইন দিয়ে পুলিশের হেফাজতে আবু সাঈদের মরদেহ নিয়ে গেছে। এ রকম অবিচার, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল পাকিস্তান শাসনামলে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ