সাতরাস্তায় টানা ৬ ঘণ্টা অবরোধ, যানজটে চরম ভোগান্তি

মনির হোসেন মিন্টু, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) : উপসহকারী প্রকৌশলী পদ শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্দিষ্ট করাসহ কয়েকটি দাবিতে গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে টানা ছয় ঘণ্টা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় তাঁদের এ অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। কোথাও কোথাও পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অনেককে রাস্তায় এক জায়গায় আটকে থাকতে হয়েছে।

সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ অবরোধের কারণে মতিঝিল–গুলিস্তান এলাকা থেকে উত্তরা অভিমুখে যান চলাচলের প্রধান সড়কগুলোর একটি বন্ধ থাকায় আজ দুপুর থেকে ঢাকার অনেক এলাকা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। সাতরাস্তা অবরোধের কারণে বিজয় সরণি উড়ালসড়কে যানবাহন গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সাতরাস্তার আশপাশ এলাকার সড়কগুলোও অনেকটা স্থবির হয়ে যায়। এতে তেজগাঁও অঞ্চল ছাড়াও রামপুরা, হাতিরঝিল, কাকরাইল, হেয়ার রোড, শাহবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, সংসদ ভবন এলাকা, মহাখালী, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অনেক যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দুপুর থেকে আটকে থাকার কারণে সাতরাস্তার কাছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে কয়েকজন গাড়িচালককে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদও করতে দেখা যায়।

বিকেল চারটার পরও সড়ক অবরোধ চলতে থাকায় অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষেরাও পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অনেককে কর্মস্থল থেকে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মগবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শফিকুল ইসলাম। তার বাসা উত্তরা এলাকায়। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তাঁর সঙ্গে কথা হয় সাতরাস্তা এলাকায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি অফিস থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। অফিস থেকে বেরিয়েই সড়কে ব্যাপক যানজট দেখতে পান। মোটরসাইকেল নিয়ে সাতরাস্তা এলাকায় এসে আর এগোতেই পারছেন না। এখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তিনি আটকে আছেন।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে যানবাহনের কয়েকজন চালককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিত-ায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাঁদের একজন মো. জামাল প্রথম আলোকে বলেন, একটি জরুরি কাজে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে রমনার উদ্দেশে রওনা দেন; কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে তিনি এখানে এসে আটকে যান। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করার পরও তাঁরা কর্ণপাত করছেন না। আরেক প্রাইভেট কারচালক আবদুল মান্নান বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিত-ায় জড়ান।

ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি মো. আশরাফুল। তিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। মো. আশরাফুল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চাকরিসহ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাঁদের দাবিগুলো নিয়ে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু তাঁদের দাবি মানার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি। এ কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস না পেলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।

পরে সন্ধ্যা ছয়টার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এর পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ