জুলাই–আগস্টে নৃশংসতা, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল এক মাস থাকবে
আনোয়ার আজমী, এবিসিনিউজবিডি.কম, ঢাকা (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪) : ছাত্র-জনতার আন্দোলন কতটা নৃশংসভাবে দমনের চেষ্টা করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার, সে বিষয়ে এক মাস তদন্ত করবে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহর ঘুরে সহিংসতার শিকার ব্যক্তি, ভুক্তভোগীদের স্বজন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
জেনেভা থেকে জাতিসংঘের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, আট সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দলের দুজন সদস্য গতকাল সোমবার ঢাকায় আসছেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছাবেন আরও তিনজন সদস্য। মূলত আগামীকালই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু হবে। তথ্যানুসন্ধান দলের অন্য সদস্যরাও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় চলে আসবেন।
প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল বাংলাদেশে চার সপ্তাহ অবস্থান করবে। তদন্তের জন্য প্রয়োজন হলে আরও কয়েক দিন তারা থাকতে পারে। জাতিসংঘ ও অন্তর্র্বতী সরকারের একাধিক সূত্র এসব বিষয় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, তথ্যানুসন্ধান দলটি গত জুলাই ও আগস্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে জমা দেওয়া হতে পারে।
অন্তর্র্বতী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত রোববার সন্ধ্যায় বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলটি স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে। এ জন্য তারা মাসখানেক বাংলাদেশে থাকবে। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে তা সরকারকে দেবে। তবে মনে রাখতে হবে, তদন্তের বিষয়ে সরকারের কোনো পর্যবেক্ষণ থাকলেও তা তথ্যানুসন্ধান দলের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হবে না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্র্বতী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লিখেন।
তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করেছিল। আট দিনের ওই সফরে প্রতিনিধিদলটি অন্তর্র্বতী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, বিক্ষোভ-সহিংসতায় শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তত ৪০টি বৈঠক করে। পরে এসব বৈঠকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধান দল তাদের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করে।