পরিবহন নেতাদের কাছে নতজানু সরকার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সোচ্চার ঠিক তেমনি একটি সময়ে মহাজোট সরকার পরিবহন শ্রমিকদের কাছে আত্মসমর্পন করলো। ‘সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এখন আর ৩০২ ধারায় (হত্যা) মামলা করা যাবে না’ সরকারের পক্ষ থেকে বুধবার এমন ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরিবহন নেতারা এই দিন ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে এই দাবির পাশাপাশি ৮ দফা দাবি আদায় করে নেয়।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের দাবি উপেক্ষা করে পরিবহন নেতাদের কাছে সরকারের এই আত্মসমর্পন নিয়ে গোটা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে উপেক্ষিত হয়েছে গণ-মানুষের দাবি। ভুলন্ঠিত হয়েছে মানবতা। এমনটাই বলেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংবিধান প্রনেতা ড. কামাল হোসেন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পর হত্যা মামলা দায়ের করা যাবে না বা ৩০২ ধারা ব্যবহার হবে না সরকারের এমন ঘোষণায় চালকদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আগেরমত আর সতর্কতা থাকবে না। থাকবে না সচেতনতাও। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষেভের সৃষ্টি করেছে। আর এ কারণে ক্ষুব্দ মানুষ হয়তো সড়ক মহা-সড়কে দুর্ঘটনার পর আইন নিজের হাতে তুলে নেবে বা নেওয়ার প্রবনতা বাড়বে।’
বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণা আমাকে অবাক করেনি। কারণ আমরা এমন দেশের নাগরিক, যে দেশে কোনো কিছুই সাধারণ মানুষদের কথা বিবেচনা করে হয় না। আর সাধারণ মানুষদের কথা চিন্তা করার সময়ই বা তাদের কোথায়। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারের এমন ঘোষণা কতটাই আত্মঘাতি, তা বোঝার বা উপলদ্ধির সময় আসছে। কষ্ট হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দেশের বিশিস্ট দুই ব্যক্তিত্ব মিসুক মনির ও তারেক মাসুদের জন্য, সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর তারা হয়তো আর বিচার পাবেন না।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সারা দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সোচ্চার, ঠিক তেমনি একটি সময়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। চালকরা এখন আর আগের মত গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সচেতন থাকবে না। বাড়বে অসচেতনতা। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে চালকরা আর মানুষ মনে করবে না।