বেতন বন্ধের হুমকি দিল পোশাক মালিকরা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ শ্রমিক অসন্তোষ চলতে থাকলে বেতন-বোনাস বন্ধ করে দেয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকরা।
ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে ঈদের আগে গত চার দিন ধরে রাজপথে শ্রমিকদের বিক্ষোভ-ভাংচুরের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ’র এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।
এতে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, “বর্তমানে এ শিল্পে যে অস্থিরতা চলছে। তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের পক্ষে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমানও বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ অস্থিরতা চলতে থাকলে ঈদের আগে মালিকদের পক্ষে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।”
রানা প্লাজা ধস ও তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রম পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সর্বশেষ ২০১০ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেড় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়।
শ্রমিকরা এবার ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা দাবি করলেও পোশাক শিল্প মালিকদের বড় সংগঠন বিজিএমইএ তা ৩ হাজার ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
মান্নান বলেন, “ন্যূনতম মজুরি কত হবে, তা নির্ধারণ করবে মজুরি বোর্ড। এখানে শ্রমিক, মালিকসহ সব পক্ষের প্রস্তাব রাখার সুযোগ আছে। আমরাও (বিজিএমইএ) একটি প্রস্তাব রেখেছি। তবে বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা আমরা মেনে নেব।”
সংবাদ সম্মেলনে থাকা বিজিএমইএ’র সাবেক সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও একই কথা বলেন।
সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠকে বসলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি এখনো। এর মধ্যেই এই সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাজপথে নেমে পড়ে।
গত কয়েকদিন ধরে চলা অবরোধ-ভাংচুরের পর সোমবার গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা দুই দফা বৈঠক করেন।
ওই বৈঠক থেকে শ্রমিকদের জ্বালাও-পোড়াও ছেড়ে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হলেও মঙ্গলবার সকালের চিত্র ছিল আগের কয়েকদিনের মতোই। সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ ও ভাংচুর হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউ ইয়র্ক থাকায় তার দায়িত্ব পালনকারী এস এ মান্নান বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে গত কয়েক দিন ধরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই শিল্প ও শ্রমিকদের স্বার্থেই এ খাতে স্থিতিশীলতা দরকার।
“শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব নেই,” বলেন তিনি।
সেলিম ওসমান বলেন, “অস্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সময়মতো জাহাজীকরণ সম্ভব হচ্ছে না, লিড টাইম ফেল হচ্ছে। এর ফলে মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।”
বিটিএমএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন শিল্পের স্বার্থে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প মালিকরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।
বিবিসিতে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানায় গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে ১৯ ঘণ্টা কাজ করানোর বিষয়টি উঠে আসে। এর ভিত্তিতে দেশের সংবাদমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা বলেন, হা-মীম গ্রুপের কারখানা হা-মীম স্পোর্টসওয়ার নিয়ে বিবিসি সে সংবাদ প্রকাশ করেছে, সেটা এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মজুরি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।
তবে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ থেকে ভাংচুরে অন্য মহলের ইন্ধন রয়েছে বলে সরকারের সন্দেহ। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও সোমবার একই ইঙ্গিত দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “তৈরি পোশাক খাতকে ধ্বংস করার জন্য একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র জড়িত।”
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ মালিকানাধীন হা-মীম কারখানায় এক শিফটে ১৯ ঘণ্টা কাজ করানোর বিষয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
“তদন্তে বিবিসির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে,” বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।
কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম, রিয়াজ বিন মাহমুদ, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মো. হাতেম উপস্থিত ছিলেন।