শ্রমিক বিক্ষোভ ভাংচুর চলছেই
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাভারে টানা পঞ্চম দিনের মতো সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করছে পোশাক শ্রমিকরা।
গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল ব্যাহত হয়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওই এলাকার শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে বুধবারও সাভারের আশুলিয়ার প্রায় ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের একটি গাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে শ্রমিকরা। পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন।
এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা শিবু মার্কেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ফতুল্লা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক অবরোধ করে। এ সময় প্রায় ১৫ মিনিট ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বৃষ্টি শুরু হলে পুলিশের ধাওয়া দেয় এবং শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এরপর সাড়ে ১০টার দিকে আবারো শ্রমিকরা ওই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে বলে প্রত্যক্শদর্শীরা জানান।
ফতুল্লার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
সংঘর্ষের সময় অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে রতন (৩২), সাইফুল ইসলাম (৩২), হক মিয়া (৬০), বাবু মিয়া (৩২), আইজউদ্দিনকে (৪০) শহরের খানপুর হাপাতালে চিকিসা দেয়া হয়েছে।
তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেট লেগেছে বলে জানান ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মাহাবুব হায়দার সামিন।
সংঘর্ষের পরপরই ফতুল্লার শিবু মার্কেট ও এর আশপাশের এলাকার পোশাক কারখানাগুলোয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জের এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানা।
গত কয়েক দিনের মতো বুধবারও গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ি ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এসব এলাকার শতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁসির উপ পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, কোনাবাড়ির বিসিক শিল্প নগরীর স্ট্যান্ডার্ড ইসলাম স্যুয়েটার্স, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিন্সসহ বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এসে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা অন্য কারখানার শ্রমিকদেরও যোগ দেয়ার আহ্বান জানায়।
একই সময়ে কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবাহ এলাকায় মাকস স্যুয়েটার্স কারখানা ও মিম নুন নীট ওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর করে।
এক পর্যায়ে শ্রমিকরা উপজেলার সফিপুর বাজারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিলে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বৃষ্টি শুরু হলে শ্রমিকরা সেখান থেকে সরে যায়।
টঙ্গী মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, বিসিক শিল্প নগরীর রেডিসন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করলে সেখানেও বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
কালিয়াকৈর থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, “সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকরা ভাংচুর করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
একই দাবিতে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার জিরানীএলাকায় মাছিহাতা ও তুরাগ পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের মুখে এদিনও আশুলিয়ার অন্তত ২০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পরে শ্রমিকরা পাশের নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক অবরোধ করে। পুলিশের গাড়ীসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে পথচারীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে সোয়া ১০টার দিকে গাড়ি চলাচল শুরু হয় বলে চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১০/১২টি যানবাহন ভাংচুর করেছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনূর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আশুলিয়া থানা পুলিশের টহল টিমের একটি পিকআপ গাড়ী ভাংচুর করেছে।