বিএনপি অফিসে পুলিশি হামলা ইতিবাচক রাজনীতি নয়
ঢাকা: বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের হানা এবং মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গণহারে গ্রেফতারের ঘটনাকে রাজনীতির জন্য উদ্বেগজনক মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা।
তারা মনে করেন, বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে।
দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “স্বাধীনতার ৪২ বছরে দলীয় কার্যালয়ে এভাবে ঢুকে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতার করতে দেখিনি। এটি অকল্পনীয়।”
তিনি বলেন “পুলিশ বলছে, তারা নাকি ককটেল খুঁজতে গেছে। মনে হয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে সরকার। কারো জন্য এটি ভালো নয়। সরকার ভুল করছে। এর জন্য আগামীতে ভুলের খেসারত দিতে হবে।”
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “বিএনপি অফিস তছনছ করে যেভাবে মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে এ ধরনের ঘটনার নজির কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে নেই।”
বোমা-নাটক জনগণ বিশ্বাস করবে না। এটা সরকারের বাকশালী আচরণ। ভবিষ্যতে এ জন্য আওয়ামী লীগকে আগামীতে চরম মূল্য দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, “রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক ও খুবই বিস্ময়কর। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথ রুদ্ধ হলো। আসলে তারা মইনউদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের মতো দেশ চালাচ্ছে। তবে এতে হতাশ হচ্ছি না। অন্ধকারের পরই আলোর দেখা মেলে।”
বঙ্গবীর বলেন, “কোনো অত্যাচারী সরকার বেশি দিন টিকতে পারেনি, তারাও পারবে না। পুলিশ যেভাবে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করছে এতে করে তারা রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছে। আগামীতে যারাই সরকার গঠন করুক না কেন তারাই এ কাজ করবে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক। বিএনপির উচিত অবিলম্বে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়া। আর আওয়ামী লীগের উচিত তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা।”
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, “এই ঘটনা আজকে নতুন নয়। স্বাধীনতার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করেছে। কোনো অবস্থাতেই দেশটিকে পুলিশি রাষ্ট্র বানানো যাবে না।”
প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি বলেন, “এটি খুব দুঃখজনক। জাতীয় রাজনীতিতে আজ যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে তা নিয়ে জাতি আজ উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করব, সরকার ও বিরোধী দল এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করবে।”
বিএনপি অফিসে পুলিশি অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনো দেখিনি। অতীতে হয়নি। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। রাজনীতির জন্য এটি খুবই অপ্রত্যাশিত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যেখানে কয়েক দিন আগে আলোচনার কথা বললেন। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে এভাবে গ্রেফতার প্রত্যাশিত নয়।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, “দেশে এখন দুই দলের অস্তিত্বের লড়াই চলছে। গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ইতিবাচক। তবে এতদিন এই মঞ্চ চলছে, কারা এর টাকা দিচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। আর এই মঞ্চকে সরকার যেভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছে, বিরোধী দল আরেকটি মঞ্চ করলে ওইভাবে নিরাপত্তা দেবে কিনা তা ভেবে দেখা উচিত।”
ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিএনপি অফিসে পুলিশি অভিযান ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনাটি পরমত সহিষ্ণুতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী।” পুলিশ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নেই পেশাদারিত্ব হারিয়ে এ অভিযান চালিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার যে দলীয়পনা শুরু হয়েছে তাতে রাজনৈতিক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। উভয়পক্ষে সহিষ্ণুতা না থাকলে দেশ দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দিকে ধাবিত হবে।” আলোচনার মাধ্যমে উভয়পক্ষকে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান বিএনপি অফিসে পুলিশের অভিযানকে রাজনৈতিক অনাচার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার পথকে রুদ্ধ করে দেবে।”