রিভিউ ছাড়া কাদের মোল্লার ফাঁসি নয়
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলে আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতের প্রধান শরিক বিএনপির আইনজীবী সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
বুধবার ফোরামের উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে মওদুদ বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য নাগরিদের রিভিউ করার অধিকার নিশ্চিত করা আছে।
“কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকারের পক্ষ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে তার রিভিউ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংবিধানে রিভিউ করার যে বিধান রয়েছে সেটাই দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং এই আইনকে আমরা কার্যকর দেখতে চাই।”
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ২৬ মার্চ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হজরত আলী লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা এবং এক মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল।
কাদের মোল্লার আইনজীবীরা বলে আসছেন, রায়ের কপি পেলেই তারা রিভিউ আবেদন করবেন। তবে এ মামলায় রিভেউয়ের সুযোগ নেই জানিয়ে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম ইতোমধ্যে বলেছেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের অনুলিপি পেলেই যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে।
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপির কোনো নেতা আপিল বিভাগের রায়ের পর এই প্রথম সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দিলেন।
মওদুদ বলেন, “এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সেই কারণে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই এ মামলা দায়ের করেছিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সাথে সাথে দাবি করছি যে, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার ফাঁসির আদেশ যেন কার্যকর করা না হয়।”
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আইন সংশোধন করে প্রসিকিউশনের আপিলের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাতে ফাঁসির রায় আসা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে দুটি বিষয়কে আমরা নজিরবিহীন বলে মনে করি। নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর আইন সংশোধন করে বাদীপক্ষকে আপিল করার সুযোগ দেয়া এবং নিম্ন আদালতের রায়ে দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে দেশের উচ্চতম আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায়ের দিন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এক ব্রিফিংয়ে বলেন এটি ভুল রায়।
ওই ব্রিফিংয়ে মওদুদ আহমদ উপস্থিত থাকলেও সেদিন তিনি কোনো কথা বলেননি।