এমডিজি অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, নিউ ইয়র্কঃ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেয়া উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বুধবার এমডিজি অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত অধিবেশনে বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
এমডিজি-৮ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিশ্রুত সম্পদের যোগান দিতে পারেনি।আমাদের এমডিজি অর্জনের প্রয়াসে আমরা আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এমডিজি-৭ কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও ২০১৫ সালের পর উন্নয়ন এজেন্ডা ঠিক করতে সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য রাজনৈতিক পটভূমি তৈরিতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“বাংলাদেশ অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাবে এবং আমরা আমাদের জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করব।”
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এমডিজি-১, এমডিজি-২, এমডিজি-৩, এমডিজি-৪, এমডিজি-৫ এবং এমডিজি-৬ পূরণ করেছে অথবা পূরণ করার পথে রয়েছে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এমডিজি-১ অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
“সুষম শিক্ষা লাভের সুযোগ সম্প্রসারণের ফলে এমডিজি-২ অর্জনে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৯৯.৪৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।”
এমডিজি-৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যু হার হ্রাসে সাফল্য অর্জন করেছে। এমডিজি-৫ অনুযায়ী মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস করার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ ও জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন এবং সাড়ে ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র চালু করা আমাদের এসব লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
এমডিজি-৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ এইচআইভি/এইডস সংক্রমন শূন্য দশমিক এক শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, যক্ষ্মা প্রতিরোধ, ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যু হার হ্রাস, শিশুদের টিকাদান, ৮৮ দশমিক ২ শতাংশ জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও ৯১ শতাংশ জনগণের জন্য পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উপকূলীয় একটি দেশ। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষে এমডিজি-৭ অর্জন খুবই কঠিন।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের অঙ্গন থেকে আমাদের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া।”
২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ঐতিহাসিক সহস্রাব্দ ঘোষণার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সে সময় আমি এখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি একটি উন্নয়ন রূপকল্প দেই এবং ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করি।”
‘অস্ত্র নয়, শান্তি শিক্ষায়’
অস্ত্রের পরিবর্তে শিক্ষা খাতে তহবিল বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে শিক্ষাকে বিশ্ব উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রাণকেন্দ্রে স্থান করে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৈশ্বিক শিক্ষার প্রথম উদ্যোগের প্রথম বার্ষিকীতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বুধবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অস্ত্রের পরিবর্তে শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রকৃত পন্থা।”
বুধবার জাতিসংঘের ইকোসোক চেম্বারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বান কি-মুনের এই ধারণা প্রতিটি শিশুকে স্কুলে যেতে, শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষার জন্য দ্রুত বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।”
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হিসাবে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। নারী শিক্ষায় গুরুত্বের কথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্থানীয় দাতাদের অর্থায়নে স্কুলে খাবার সরবরাহ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মাদ্রাসার পাঠক্রমে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি অটিজম ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
এসব প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইউএনডিপি ও অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।