১১ অক্টোবরের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, বাগেরহাটঃ আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শনিবার বিকালে রামপালের দিগরাজ বাসস্ট্যান্ডে লংমার্চের সমাপনী জনসভায় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সুন্দরবন ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
২২ অক্টোবর এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সরকারি কর্মসূচি স্থগিত না করলে সুন্দরবন রক্ষায় বৃহত্তর কর্মসূচি নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়।
এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনার প্রতিবাদে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি বাগেরহাটের রামপালের উদ্দেশে পাঁচদিনের লংমার্চ শুরু করে।
ঢাকা থেকে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে শনিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাটের মংলার রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে দিগরাজ এলাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় কমিটির লংমার্চ কর্মসূচি শেষ হয়।
লংমার্চ শুরুর পরদিন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী আগামী ২২ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে যৌথ এই প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনের কথা জানান।
ঘোষণাপত্রে সুন্দরবনকে সুস্থ ও পুনঃউৎপাদনক্ষম অবস্থায় বিকশিত করতে সুন্দরবন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নেরও দাবি জানানো হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের দেয়া প্রেসনোটের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে জাতীয় কমিটির দেয়া সুন্দরবন রক্ষা বিষয়ক বিজ্ঞানধর্মী বিভিন্ন বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, এই লংমার্চে জনগণ সুন্দরবন ধ্বংসকারী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। যদি এরপরও সরকার ভিত্তিস্থাপন করে, তবে জনগণ তা উপড়ে ফেলবে।
জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শেখ মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কমিটির মংলা শাখার সদস্য সচিব নূর আলম শেখ।
সুন্দরবন ঘোষণাপত্রে বলা হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে শুরু হওয়া লং মার্চ ঢাকা, সাভার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, গোয়ালন্দ, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জ, যশোর, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর, খুলনা ও বাগেরহাট শহর হয়ে মংলার দিগরাজ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে।
পাঁচ দিনের এই কর্মসূচিতে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। কয়েকলাখ মানুষ সুন্দরবনকে রক্ষার এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।
এই প্রকল্প বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে দাবি করে এর বিরোধিতা করছে বাম দল সমর্থিত তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি। তবে সরকার বলছে, পরিবেশের ক্ষতি না করেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টার ঘোষণার পরপরই লংমার্চকারীরা প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।
দিগরাজের সমাবেশ থেকে সরকারকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিন প্লাটুন পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের এই সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।
লংমার্চের চতুর্থ দিনে শুক্রবার খুলনায় পৌঁছে আন্দোলনকারীরা। শনিবার সকালে নগরীর হাদিস পার্ক থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়।
বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সকালে খণ্ড খণ্ড মিছিল জড়ো হতে থাকে শহীদ হাদিস পার্কে। রওনা হওয়ার আগে সেখানে সমাবেশ হয়।
হাদিস পার্কের সমাবেশে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “লংমার্চে আমরা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছি। এই মানুষদের নিয়েই সুন্দরবন ধ্বংসকারী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার চেষ্টা প্রতিহত করব।”
দুপুর ১২টার দিকে বাগেরহাট শহরে পৌঁছানোর পর লংমার্চকারীদের স্বাগত জানান তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির জেলা সদস্য সচিব ফকরুল হাসান জুয়েলসহ স্থানীয় নেতারা।
লংমার্চকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত বিলবোর্ড লাগানো হয়, রাস্তার দেয়ালে লাগানো হয় পোস্টার।
শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বরে সমাবেশের পর বিকালে ৪২ কিলোমিটার দূরের বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন দিগরাজের দিকে রওনা হয় লংমার্চ।