অবমাননা আইনের রায় স্থগিতের আবেদন সরকারের
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আদালত অবমাননা আইনকে অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিতের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ পাঁচ সচিবের পক্ষে রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন জমা দেয়া হয়।
আবেদনকারী বাকি চার সচিব হলেন- রাষ্ট্রপতির কর্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব ও সংসদ সচিবালয়ের সচিব।
আবেদনে বলা হয়, “আমরা এ ব্যাপারে আপিলের আবেদন করব। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ার পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হোক।”
সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইন গত ২৬ সেপ্টেম্বর অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ ওই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, এই আইন সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এতে সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের এমন সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ১০৮ ও ১১২ অনুচ্ছেদের সাংঘর্ষিক।
“সুপ্রিম কোর্ট কখনোই সত্য মন্তব্য বা সমালোচনামূলক প্রকাশনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় না। তবে সত্য প্রকাশনাকে অবশ্যই সাংবিধানিক সীমানা মানতে হবে। বিধিনিষেধ ছাড়া পূর্ণ স্বাধীনতা সৃষ্টি করে পূর্ণ বিশৃঙ্খলা।”
রায়ের পর বিচারক বলেন, “গণমাধ্যম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা চাই না, সংবাদ মাধ্যমের হাত বাধা থাকুক। তবে আমরা এটাও চাই না, কেউ সীমানার বাইরে যাক।”
এছাড়া সংশোধিত আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের যে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, তাও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
রায়ের পর আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “এই রায়ের ফলে ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন নিম্ন আদালতের জন্য কার্যকর থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের জন্য সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ পাস করে সরকার। এর চতুর্থ ধারায় বলা হয়, নির্দোষ প্রকাশনা বা বিতরণ অবমাননা নয়।
ওই আইনের পঞ্চম ধারায় বলা হয়, আদালতের বিচারিক কার্যধারা বা তার অংশ বিশেষ নিয়ে অথবা শুনানি শেষে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন কোন মামলার গুণাগুণ সম্পর্কে ‘পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ’ সংবাদ প্রকাশ করলে তা অদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হবে না।
কোনো ব্যক্তি অধস্তন আদালতের বিচারক সম্পর্কে ‘সরল বিশ্বাসে’ কোনো বিবৃতি বা মন্তব্য করলে অথবা আদালতের খাস কামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত বিচারিক কার্যধারা সম্পর্কে পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ করলে তাও আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হবে না বলে ষষ্ঠ ও সপ্তম ধারায় উল্লেখ করা হয়।
নবম ধারায় বলা হয়, এ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য নয় এমন প্রকাশনা বা কাজ এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য হবে না।
১০, ১১ ও ১৩ (২) ধারায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমানানা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন, বিধিমালা, সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে কোনো পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন বা স্মারক জারি করলে বা এবং আদালতের কোন রায় , আদেশ বা নির্দেশ ‘যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও’ বাস্তবায়ন বা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলা যাবে না।
কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হলে তিনি সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন, তবে দোষী সাব্যস্ত হলে ওই টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।
আদালত অবমাননার মামলায় জড়িত কোনো সরকারি কর্মকর্তা অপসারিত হলে বা অবসরে গেলে আদালত তাকে অবমাননার দায় থেকে অব্যহতি দিতে পারবে।
এছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত কেউ আপিলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত তার দণ্ড মওকুফ বা হ্রাস করতে পারবে।
এই ধারাগুলো সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে গত ২৫ মার্চ অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট আয়শা খাতুন রিট আবেদন করেন। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে হাই কোর্ট আইনটি অবৈধ ঘোষণা করে।
রায়ে আদালত বলে, আইনে জনগোষ্ঠীর বিশেষ একটি অংশকে সুরক্ষা দেয়া বৈষম্যমূলক। ঢাকা ল’ রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা আইন অনুসারে অবারিত নয়। ‘ফেয়ার ও ট্রুথফুল’ প্রকাশনারও একটা নির্দিষ্ট পরিমণ্ডল থাকতে হবে।