সহায়ক বইয়ের নামে বাণিজ্য

2012-01-01-10-10-02-4f0030fac7ae0-jessore-bookঢাকা: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও সহায়ক পাঠ্যপুস্তকের নামে চলছে জমজমাট বাণিজ্য৷ সরকার নির্ধারিত বইয়ের বাইরেও প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীকে গড়ে ১০/১২টি সহায়ক বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে৷

ঢাকার কমলাপুর স্কুল এন্ড কলেজে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম সব শ্রেণিতেই সহায়ক বইয়ের জন্য আলাদা তালিকা আছে৷ টেক্সটবুক বোর্ড থেকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ব্যাকরণ, বিজ্ঞানসহ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব ধরণের বই দেয়া হলেও একই ধরণের সহায়ক বইও কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের৷ আর তা সংখ্যায় অনেক৷ যেমন প্রথম শ্রেণিতে বোর্ডের বই ৩টি আর সহায়ক ১০টি৷ মোট ১৩টি বই পড়তে হয়৷ দ্বিতীয় শ্রেণিতে বোর্ড নির্ধারিত বই ৩টি৷ কিন্তু সহায়ক ৮টিসহ মোট ১১টি বই পড়তে হয়৷ এভাবে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত গড়ে বাড়তি ১০টি বই কিনতে হচ্ছে সহায়ক বইয়ের নামে ৷

কথিত সহায়ক বইয়ের জন্য লাইব্রেরি যেমন নির্দিষ্ট করা৷ তেমনি প্রকাশকও নির্দিষ্ট৷ আর লেখকও কর্তৃপক্ষের ঠিক করে দেয়া৷ সহায়ক বই কিনতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গড়ে দেড় হাজার টাকা খরচ করতে হয়৷

অভিভাবকরা জানান, এইসব সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন আছে কি নেই, তারা তারা জানেন না৷ স্কুল থেকে কিনতে বলা হয়, তাই তারা কিনতে বাধ্য হন৷

আর শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ওপর এই বাড়তি বই বোঝা হয়ে যায়৷ তাদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথাও জানায়৷

এই চিত্র শুধু একটি স্কুলের নয়৷ ঢাকার প্রায় সব স্কুলেই এখন সহায়ক বইয়ের চাপ৷ শের-ই-বাংলা স্কুল এন্ড কলেজেও একই অবস্থা৷ অভিভাবকরা জানান ঢাকার সব স্কুলেই সহায়ক বই কিনতে বাধ্য করা হয়৷

কমলাপুর স্কুল এন্ড কলেজের একজন শিক্ষক বললেন ২২০ টাকা দাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা যে সহায়ক বই কেনেন, তার দাম কোনভাবেই ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়৷ আর এই সহায়ক বইয়ের কোন প্রয়োজনও নেই৷ আসলে সহায়ক বইয়ের এই ব্যবসার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ নীতি নির্ধারকরা জড়িত৷ এ থেকে তারা বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পান৷

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মোস্তফা কামালউদ্দিন জানান, সরকার নির্ধারিত বইয়ের বাইরে সহায়ক বইয়ের কোন অনুমোদন তারা দেন না৷ যারা সহায়ক বইয়ের নামে বাড়তি বই কিনতে বাধ্য করছেন তারা বেআইনি কাজ করছেন৷

কমলাপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর আলম মনসুর সহায়ক বইকে বেআইনি বলে স্বীকার করলেও তার দাবি, সব স্কুলেই সহায়ক বই আছে৷ তাই প্রতিযোগিতায় টিকতেই তারা শিক্ষার্থীদের সহায়ক বই কিনতে বলেন৷ তবে তিনি সহায়ক বই থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন৷

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এই সহায়ক বইয়ের সঙ্গে অবশ্যই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং কোন কোন শিক্ষকের আর্থিক লাভের বিষয়টি জড়িত৷ তিনি বলেন আর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর সহায়ক বইয়ের চাপ তাদের মানসিক বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করছে৷ তিনি বলেন সহায়ক বই নিষিদ্ধ করে বসে থাকলেই চলবেনা৷ সরকারকে তা বাস্তবে কার্যকর করতে হবে৷

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ