শুধু বর্জন নয় একক নির্বাচন প্রতিহত করব

Khaleda jia খালেদা জিয়া khulna খুলনারিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, খুলনাঃ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে তা কেবল বর্জন নয়, প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে রোববার ১৮ দলীয় জোটের এক জনসভায় তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিল পাস না করলে ২৪ অক্টোবরের পর এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর অধিকার নেই।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনেই দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর বিরোধিতা করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিরোধী দল বিএনপি।

বিরোধী দলের নেতা বলেন, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে মেয়র নির্বাচিত করে খুলনার মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছে।

“দেশের জনগণ আজ জেগে উঠেছে। মানুষ মনে করে-এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না।”

২৫ অক্টোবরের মধ্যে সংসদে নিদর্লীয় সরকার বিল আনার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিবাচনে আমরা যাব না, যাব না, যাব না। শুধু তাই নয়, ওই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। প্রতিহত করা হবে।”

১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে বেলা ২টায় এই জনসভা হয়। খুলনার ১১ টি জেলা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে জনসমুদ্রে পরিণত হয় জনসভাস্থল।

দীর্ঘ ৫০ মিনিটের বক্তৃতায় সরকারের ‘ব্যর্থতা, অপশাসন, দুর্নীতি’ এবং  আগামী নির্বাচন ও আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেতা।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।

২৫ অক্টোবরের পর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে জানিয়ে জনগণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

“সারাদেশে মানুষ জেগে উঠেছে। সরকার যদি সংসদে দ্রুত বিল নিয়ে না আসে তাহলে মানুষের যে স্ফুলিঙ্গ আমি দেখেছি, তা ঠেকানোর ক্ষমতা কারো থাকবে না।”

ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা ‘একক নির্বাচনে কাজ না করলে’ সরকারি কর্মকর্তাদের ‘বাড়ি পাঠানো’ হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “সরকার বুঝতে পেরেছে, চুরি করে এখন কিছু করা যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের একজন এমপি সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

‘‘সরকারকে বলব, আপনাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি পাঠানোর ক্ষমতা থাকবে না। আপনাদেরকেই বাড়ি পাঠানো হবে।”

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘অন্যায় নির্দেশ’ না মানার আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলে এ জন্য কারো চাকরি গেলে এবং বিএনপি আগামী ক্ষমতায় গেলে তাদের ‘পুনর্বহাল’ করা হবে।

“সরকার বলে বেড়ায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকের চাকরি চলে যাবে। এটা ঠিক নয়। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। আমরা কাউকে চাকুরিচ্যুত করব না। বরং এই সরকার যাদের চাকরিচ্যুত করেছে, তাদের পুনর্বহাল করা হবে।”

খালেদা জিয়া দাবি করেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ‘ভরাডুবি’ হবে। আর তাদের অধীনে নির্বাচন হলে ‘গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে’ যাবে।

গণতন্ত্র রক্ষায় দেশে জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও সর্বস্তরের পেশাজীবীদের সহযোগিতা চার খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “রাজপথে আবার দেখা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেঈমান, জুলুমবাজ সন্ত্রাসী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”

অবিলম্বে সব রাজবন্দির মুক্তিও দাবি করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার নাকি জঙ্গিবাদ দমন করেছে। তিনি মিথ্যাচার করেছেন।”

ফখরুলের দাবি অতীতে আওয়ামী লীগের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে; এবারও ঘটছে।

“কেবল তাই নয়, সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে কানে কানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে সবাই অংশ নেবে। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এখন ১০ ভাগও জনপ্রিয়তা নেই। অথচ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৪০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে জাতিসংঘে গেছেন।”

এতো বিশাল বহর নিয়ে সফরে যাওয়া ‘সরকারি অর্থের অপচয়’ ছাড়া কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।

বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি সাংসদ নুরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, খুলনার নির্বাচিত সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জমিয়তে উলামা ইসলামের শাহীনুর পাশা চৌধুরী জনসভায় বক্তব্য দেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম, ইজ্জত উল্লাহ, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, আমিনুল ইসলাম, মোহাদ্দেস আবদুল খালেক, মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাওলানা শামীম সাঈদী, ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ এক ডজন নেতা জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহ শরীফ কামাল তাজ, কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমী,যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, ছাত্র দলের সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল বক্তব্য রাখেন।

১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, এনপিপি‘র মহাসচি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল মালেক চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, বিএনপির সহসভাপতি চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ড. ওসমান ফারুক, এ জেড জাহিদ হোসেন, শাহ আবু জাফর, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, হারুন অর রশীদ, রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ