পুলিশকে ফুল দিয়ে ‘স্যালুট’ !
ঢাকা: বিস্ময়ে থমকে দাঁড়ালেন ব্যস্ত পথচারী৷ পুলিশের হাতে ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো, এমন তো আগে কখনো দেখিনি! রাজধানীতে এভাবে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষদেরও অবাক করে দিচ্ছে ‘স্যালুট’৷
‘‘ফ্লাওয়ার্স আর দ্য সুইটেস্ট থিংস গড এভার মেড অ্যান্ড ফরগট টু পুট সোল ইনটু” –রালফ ওয়ালডো এমারসনের এ কথা প্রায় আড়াইশো বছরের বাসী৷ তা হোক, তাই বলে পৃথিবীতে ফুল যে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে অনুপম দান, যাতে তিনি শুধু আত্মাটাই দেননি ভুল করে – তা বিশ্বাস করতে কি ইচ্ছে না হয়ে পারে? সৌন্দর্যই শুধু নয়, ফুলের সৌরভও মন ছুঁয়ে যায়৷
এ এক অতুল উপহার৷ এমন উপহার তাঁকেই মানায় যাঁকে ভালোবাসা যায়৷ তাই পুলিশের হাতে ফুল তুলে দেয়া বাংলাদেশে অন্তত চমকে দেয়ার মতোই৷ ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’- সাধারণ মানুষের কাছে এটা যেন শুধুই অসার আপ্তবাক্য৷ বলতে হয় তাই বলা৷ বিশ্বাস করে ক’জন!
শুধু বাংলাদেশ নয়, বলতে গেলে পুরো উপমহাদেশেই পুলিশের ভাবমূর্তি নেতিবাচক৷ বাংলায় তো প্রবাদতুল্য কথাই আছে, ‘‘বাঘে ছুলে দশ ঘা, পুলিশে ধরলে আঠারো ঘা৷” সুতরাং পুলিশ হইতে সাবধান! শিশু কথা শুনছেনা, সময়মতো খাচ্ছেনা, ঘুমাচ্ছে না? বলুন, ‘‘পুলিশ ডাকবো কিন্তু”, মহৌষধের কাজ হবে৷ শৈশব থেকেই সবাই জানে, পুলিশ ভীতিকর, ‘জনগণের বন্ধু’ বললেও খুব না ঠেকলে কেউ তাঁকে বন্ধু ভাবেনা৷ অথচ ছোট-বড় যে কোনো সমস্যায় পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয় সবাইকেই৷ সবসময় আশাহত হয়েই ফিরতে হলে একটা দেশের হাল যে কেমন হতো তা কল্পনা করলেও গা শিউরে ওঠে৷
উল্টো দিকটা ভাবুন৷ ‘৭১-এর কালো রাত্রিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে প্রথম যাঁদের অস্ত্র গর্জে উঠেছিল তাঁরা কিন্তু পুলিশ।
আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তাঁরা কিন্তু বুক চিতিয়ে লড়েছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর সোচ্চার হওয়ার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির যে বিক্ষোভের নামে ধংসযজ্ঞে নামে, তা রুখতে গিয়েও প্রাণ গিয়েছে পুলিশের৷ অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তরুণ সাংবাদিক জিনাত জোয়ার্দার রিপার খুব স্বাভাবিক কারণেই মনে হয়েছে এত করেও পুলিশ সদস্যরা মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেননা৷ তাই তিনি গড়ে তোলেন ‘স্যালুট’৷ গ্রুপটি গত কিছুদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় নেমে পড়ছে হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে৷ রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ‘ধন্যবাদহীন’ দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্যদের হাতে সেই ফুল তুলে দিয়ে, তাঁদের সম্মান জানাচ্ছেন, রিপা এবং তাঁর বন্ধুরা বলছেন, ‘‘দেশের জন্য আপনারা যা করছেন আমরা এ জন্য কৃতজ্ঞ৷ আমরা আপনাদের ভালোবাসি৷”
মাহমুদুল ইসলাম, ফারাবি বিন জহির ও তুষার – বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন শিক্ষার্থীকে নিয়ে রিপা পুলিশকে শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকার রাস্তায় নেমেছিলেন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে৷ উদ্দেশ্য জনমনে পুলিশের জন্য প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে আনা৷ অল্প কয়েকদিনেই সে কাজে তাঁরা বেশ সফল৷ সব বয়স, সব পেশার মানুষ এসে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে৷ এভাবে তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখে খুশিতে কেঁদেও ফেলছেন অনেক পুলিশ সদস্য৷ জনগণের সেবার কথা ভেবে শরিফা পুলিশে যোগ দিয়েছেন বেশি দিন হয়নি৷ হরতালে তিনি হলেন মারাত্মকভাবে আহত৷ ‘স্যালুট’ তাঁকে সমবেদনা এবং কৃতজ্ঞতা জানালো হাসপাতালে গিয়ে৷
রিপার বিশ্বাস, এভাবে সবাই ভালো কাজকে সম্মান জানালে পুলিশ আর জনগণের সম্পর্কে একদিন কাঙ্খিত পরিবর্তন আসবেই৷ তাই বলে পুলিশের ব্যর্থতা, দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো থেকেও দৃষ্টি সরিয়ে রাখবেনা ‘স্যালুট’৷
জিনাত জোয়ার্দার রিপা জানিয়েছেন পুলিশকে স্যালুট জানানো ঢাকা থেকে শুরু হলেও এ উদ্যোগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে৷ সূত্র: ডয়েচ ভেলে