ইন্টারনেটের শত্রুর তালিকায় ইরান, চীন
ইরান এবং চীন আবারো ইন্টারনেটের শত্রুর তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠন রিপোটার্স উইদাআউট বডার্স এই তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এই দুই দেশের ব্লগাররা ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন৷
ইন্টারনেটে নানা উপায়ে গণমাধ্যম এবং অধিকার অ্যাক্টিভিস্টদের উপর নজরদারির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের কয়েকটি দেশ৷ প্রয়োজনে এসব দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপেও দ্বিধা করে না৷ এরকম কিছু দেশের নাম প্রকাশ করেছে রিপোটার্স উইদাআউট বডার্স (আরডাব্লিউবি)৷ মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘‘বাহরাইন, চীন, ইরান, সিরিয়া এবং ভিয়েতনাম হচ্ছে ইন্টারনেটের শত্রু৷” ১২ই মার্চ ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ডে এগেনস্ট সাইবার-সেন্সরশিপ’ উপলক্ষ্যে এই তালিকা প্রকাশ করে আরডাব্লিউবি৷
সংগঠনটি জানিয়েছে, এই পাঁচটি দেশের ‘সরকার’ সক্রিয়ভাবে সংবাদ সরবরাহকারীদের উপর তীক্ষ্ণ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে, যা মানুষের তথ্য জানার অধিকার এবং মানবাধিকারের ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন।
চীনে অনলাইন বিপ্লব
চীনের কারাগারে এখন বন্দি আছেন ৩০ জন সাংবাদিক এবং ৬৯ জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট৷ পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশের তুলনায় এই দেশটি সংবাদকর্মী এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের কারাবন্দি করছে বেশি৷ চীন ইন্টারনেটের উপরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে এবং সংবেদনশীলতার অজুহাতে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট ইন্টারনেট থেকে মুছে দিচ্ছে কিংবা সেদেশে বিভিন্ন লিংক নিষিদ্ধ করছে৷
তবে চীনের শাসকগোষ্ঠীর এই প্রতিরোধ ডিঙ্গিয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ডয়চে ভেলের ‘সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ অ্যাওয়ার্ড দ্য বব্স এর চীনা ভাষার জুরি হু ইয়ং এই বিষয়ে বলেন, ‘‘বাধা সত্ত্বেও বিভিন্ন ফোরাম, ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগ এবং মাইক্রোব্লগে বিপ্লব এগিয়ে যাচ্ছে৷”
হু ইয়ং জানান, চীনের কোটি কোটি মানুষকে স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম৷ শাসকগোষ্ঠীর কড়া নজরদারি এবং সেন্সরশিপ সত্ত্বেও এই মাধ্যম ব্যবহার করে নানাভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশে সক্ষম হচ্ছেন মাইক্রোব্লগাররা, যা থেকে গণমাধ্যম কর্মী এবং সাধারণ মানুষ অনেক কিছু নিরপেক্ষভাবে জানতে পারে৷
ইরানের ‘হালাল ইন্টারনেট’
চীনের মতো ইরানের সরকারও দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে৷ এখন সে দেশ নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে ‘হালাল ইন্টারনেট’ তৈরির চেষ্টা করছে৷ আরডাব্লিউবি’র মতে, ইরানের ইন্টারনেট দুনিয়া অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি রাজনৈতিক নয়৷ এটা শুধু অনেক বেশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
আরডাব্লিউবি জানিয়েছে, ইরানে ‘অফিশিয়াল লাইন’ থেকে বিচ্ছিন্ন যেকোন কিছুকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে গণ্য করে, সে সবের উপর নজরদারি শুরু হয় এবং প্রয়োজনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়৷
দ্য বব্স এর ইরানি ভাষার জুরি আরাশ আবাদপুর এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইরান সরকার ইন্টারনেট নিয়ে আতঙ্কিত৷ যেকারণে তারা এক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সীমিত বিনিয়োগ করছে৷”
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরান এবং সিরিয়ায় ইন্টারনেট নজরদারির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ রিপোটার্স উইদাআউট বডার্স চাচ্ছে অন্যান্য যেসব দেশ মানুষের মুক্ত মত প্রকাশের অধিকারে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে এবং বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে, সেসব দেশেও এধরনের যন্ত্রপাতি রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হোক৷