জুলফিকার, আবুল হাসানকে তলব করবে দুদক
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার তদন্তের জন্য কানাডীয় নাগরিক জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে দুদক।
সেইসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও আবার তলব করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের দায়ের করা মামলার বাদি মির্জা জাহিদুল আলম।
তবে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিষয়ে দুদক এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি।
মির্জা জাহিদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “সম্প্রতি কানাডার আদালতে পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলায় আবুল হাসান চৌধুরী ও জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদকের তদন্তের স্বার্থেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।”
তবে কবে নাগাদ তাদের তলব করা হবে সে বিষয়ে কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
“আমরা এখনো তার (জুলফিকার) ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করছি। এটুকু জানতে পেরেছি, সে কানাডাতেই আছে। বাংলাদেশে তার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। সে পেশায় একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, ঢাকার লালমাটিয়ায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মও তার রয়েছে।”
কুমিল্লার অধিবাসী ও জন্মসূত্রে পাকিস্তানের নাগরিক জুলফিকার গত ১২ বছর ধরে কানাডায় আছেন বলে মির্জা জাহিদ জানান। ব্যবসার কাজে তিনি পাকিস্তানেও নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি ঢাকায় এসএনসি লাভালিনের অন্যতম এজেন্ট।
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জুলফিকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না- তা এখনো জানা না গেলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য ঘুষের প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব ব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি বিভাগ এ অভিযোগ তুললে পদ্মা প্রকল্পে ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদানকারী এ সংস্থার প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলারের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।
বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ- তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান চৌধুরী ও সেতু বিভাগের তখনকার সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে এক গোপন বৈঠকে প্রকল্পব্যায়ের ১২ শতাংশ অর্থ ঘুষ সেধেছিলেন এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইল।
বিশ্ব ব্যাংকের দাবি, রমেশ শাহর ডায়েরিতে কয়েকটি নাম পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সৈয়দ আবুল হোসেন, সচিব মোশাররফ হোসেনের নামও রয়েছে। এদের সবাইকেই ঘুষ দেয়ার কথা ভেবেছিল এসএনসি লাভালিন।
প্রায় ৬ মাস অনুসন্ধান শেষে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর মোশাররফ হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক, যেখানে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং আবুল হাসান চৌধুরীকে রাখা হয় ‘সন্দেহভাজন ব্যাক্তির’ তালিকায়।
জুলফিকারের নাম রমেশের ডায়েরিতে ছিল না, বিশ্বব্যাংকও তার সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি, দুদকের এফআইআরেও ওই নাম আসেনি।
কানাডায় চলমান মামলার অভিযোগপত্রে নাম আসায় দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে চায় বলে মির্জা জাহিদ জানান।
এ মামলা নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার সিবিসি নিউজে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ‘গুরুত্বপূর্ণ লবিস্ট’। এসএনসি লাভালিনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গোপন বৈঠকের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আবুল হাসান চৌধুরী ও জুলফিকার। এ কারণেই ঘুষ ষড়যন্ত্রে আবুল হাসানের সমম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করছে কানাডীয় আদালত।
ইতোমধ্যে আবুল হাসান চৌধুরীকে কানাডীয় আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়েছে।
দুদকের এক কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, আবুল হাসান চৌধুরীকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “আমরা নিয়মিত কানাডার সাথে যোগাযোগ রাখছি। জুলফিকারের বিষয়ে কিছু তথ্য তারা আমাদের দিয়েছে। তারা বলেছে তার(আবুল হাসান চৌধুরী) বিষয়েও তারা আমাদের তথ্য দেবে।”
কানাডা থেকে তথ্য পেলেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলব করা হবে বলে দুদক চেয়ারম্যান জানান।
তবে মামলার এজাহারে ‘সন্দেহভাজন’ হিসাবে নাম আসা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি দুদক।
এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে এম বদিউজ্জামান বলেন, “প্রাপ্ত তথ্যের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে।”