সরকারের পদত্যাগেই সকল সমাধান
সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতেই সকল সমাধান মিলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আটক সব নেতা-কর্মীকে মুক্তি না দিলে আগামী ১৮ ও ১৯ মার্চের হরতালের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে ছাড়া পাওয়ার বিকালে নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তার সংবাদ সম্মেলনের পরপরই রুহুল কবীর রিজভী, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ আটক দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
সোমবার বিএনপি কার্যালয় থেকে ফখরুলসহ এই সবাইকে আটক করা হলেও মঙ্গলবার সকালে ফখরুল, সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “দলীয় কার্যালয় থেকে আটক নেতা-কর্মীদের আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চের হরতাল বহাল থাকবে।”
আটক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
তিন নেতার মুক্তি সমঝোতার ভিত্তিতে কি না- প্রশ্ন করা হলে সদ্য ছাড়া পাওয়া ফখরুল বলেন, “এটি সঠিক নয়, আপনাদের বায়বীয় ধারণা।
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সরকারের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব আসেনি। আপনারা যে সমঝোতার ইঙ্গিত করেছেন, তা সঠিক নয়।”
জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার এসব কথা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “সঙ্কট উত্তরণে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হন্তান্তরই একমাত্র পথ।”
“নইলে সরকার পতনের আন্দোলন চলবে,” সরকারকে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আলোচনার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি দিনে যে কথা বলেন, তা রাতে নিজেও মনে রাখেন কি না জানি না। তবে এটা ঠিক, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার এরকম প্রস্তাব জেনে থাকলেও তা মনে রাখেন না।”
সোমবার পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “বিএনপির কার্যালয়ের ওপর টর্নেডো বয়ে গেছে। এজন্য সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে।”
পুলিশ কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়ে দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ অর্থ একটি ট্রাংকে করে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান বিএনপি মুখপাত্র।
সোমবার অভিযানের সময় বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি ট্রাংক পুলিশকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া দপ্তরের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কও খুলে নেয়া হয়।
সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের পর পণ্ড হয়ে যায়। এর কিছু সময় পরই বিএনপি কার্যালয়ে ঢোকে পুলিশ।
ওই বিস্ফোরণে জোটকর্মীরাই ঘটিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। অন্যদিকে বিএনপি এর জন্য সরকারকে দায়ী করে মঙ্গলবার দিনব্যাপী হরতাল ডাকে।
বিভিন্নভাবে ভাংচুর, কিছু হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাংচুরের মধ্য দিয়ে এই হরতাল শেষ হয়েছে।
সারাদেশে স্বতস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “এর মাধ্যমে জনগণ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তাদের আর নৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।”
হরতালে সারাদেশে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার এবং কার্যালয় তছনছের কারণে দলের দপ্তরের কাজ সামলানো ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন ছাড়া পাওয়ার দুই নেতা সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
এছাড়াও ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, সালাউদ্দিন আহমেদ, রেহানা আখতার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, কায়সার কামাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।