প্রার্থীর বদলে দলভিত্তিক নির্বাচনের প্রস্তাব
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রার্থীর বদলে দলভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা রেখে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থাও প্রকাশ করেছেন সরকারের এই শরিক নেতা।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, তার দল নির্বাচনের পক্ষে। তবে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
“কিন্তু তা আদৌ হবে কি না এ বিষয়ে জনগণের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নির্বাচন কমিশনের যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্টু নির্বাচন করতে পারবে কি না, আমি নিশ্চিত নই।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে যে ‘সঙ্কট’ উপস্থিত, তার মূল ‘অনেক গভীরে’।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা হলেও তার সমাধান হওয়া সম্ভব নয়।
“বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তাতে অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাবস্থা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। হাজার চেষ্টা করেও কোনো নির্বাচনকে আমরা বিতর্কের বাইরে রাখতে পারছি না।
“এই পদ্ধতিতে মাস্তান, কালো টাকার মালিক, অর্থ ও বিত্তের জোরে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের দলীয় মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ রয়ে গেছে। সত, বিজ্ঞ ও ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা ও দেশ সেবা করার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন।”
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।
এরশাদ বলেন, “সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি যখন দলীয় শাসন ব্যবস্থা, সেক্ষেত্রে নির্বাচনও শুধু দলের ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ, ভোটাররা দলকে ভোট দেবে, সরাসরি প্রার্থীকে নয়।”
এরশাদের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা হবে ৩০০।
প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তাদের সামর্থ্য অনুসারে প্রার্থী মনোনীত করে নির্বাচন কমিশনে তালিকা দেবে। ওই তালিকাতেই প্রত্যেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র থাকবে।
একই প্রার্থী একাধিক দলের তালিকায় থাকলে তার প্রার্থীতা বাতিল হবে।
প্রত্যেক দল নির্ধারিত কোটা মেনে এই প্রার্থী তালিকা তৈরি করবে। প্রার্থীর কোটা হবে- সাধারণ ৫০%, মহিলা ৩০%, সংখ্যালঘু ১০%, পেশাজীবী ১০%।
সাধারণ প্রার্থীর কোটায় যে কোনো প্রার্থী থাকতে পারেন। পেশাজীবী কোটায় থাকবেন শিক্ষক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পপতি, ব্যাবসায়ী ও শ্রমিক নেতারা।
ইসতেহারের মতো এই প্রার্থী তালিকাও দেশবাসীর কাছে প্রচার করবে দলগুলো।
এরপর নির্বাচন হবে এবং ভোটাররা তাতে প্রার্থীর বদলে দলকে ভোট দেবেন।
কোন দল কোন কোটায় কতো আসন পাবে- নির্বাচন কমিশন তা নির্ধারণ করবে দলগুলোর পাওয়া ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে।
যে দল সর্বাধিক ভোট পাবে, সে দলই ভগ্নাংশের সুযোগ পাবে।
কোনো দল কাস্টিং ভোটের ৫০ শাতংশ পেয়ে গেলে তারা ১৫০ আসন পাবে। কোনো দল কাস্টিং ভোটের এক শতাংশ ভোট পেলে তারা পাবে ৩টি আসন।
কোনো দল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১. ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেলে তাদের আসন হবে ৪টি।
এরপর ওই দলটি তাদের আগের ঘোষিত প্যানেল থেকে চারজনকে সংসদ সদস্য মনোনীত করবে।
অবশিষ্ট ভগ্নাংশের যোগফলের সুবিধা সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত দল ভোগ করবে।
কোনো দলের প্রতিনিধির মৃত্যু হলে বা পদত্যাগ করলে অথবা তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হলে ওই আসনে কোনো উপনির্বাচন হবে না। সংশ্লিষ্ট দল তাদের প্রার্থী তালিকা থেকে নতুন একজনকে সাংসদ মনোনীত করবে। নির্বাচন কমিশন তাকেই নির্বাচিত ঘোষণা করবে।
অবশ্য ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে না করে আগের মতোই সরাসরি প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের প্রস্তাব করেছেন এরশাদ।
তার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যে কোন নির্বাচনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাহী ক্ষমতার অধিকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, “বর্তমানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মতো যেসব রাজনৈতিক দল আছে তাদের নেতাদের মধ্যে সম্ভবত বয়সে আমিই প্রবীণ। তবে প্রাচীন ধ্যানধারণা আগলে রাখার পক্ষে আমি নই। সে কারণেই দেশ ও জাতিকে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করি। সমস্যা সৃষ্টি হলেই সমাধানের পথ খোঁজা হয়।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে বিষয়টি প্রস্তাবে এলেও তা কীভাবে নির্ধারিত হবে- তার রূপরেখা এরশাদ দেননি।
সংসদের চলতি অধিবেশনে জাতীয় পার্টি এই প্রস্তাব তুলবে কি না জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
“আমি এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে চাই। জনগণ যদি বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং সমর্থন করেন তাহলে সরকার অবশ্যই জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।”
এই সংস্কার প্রস্তাব ‘আশার আলো’ দেখতে পারবে বলেও এরশাদের প্রত্যাশা।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) এর নির্বাহী নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।