গণজাগরন সমাবেশ স্থগিত, হরতাল প্রত্যাহার করলো হেফাজত
ঢাকা: হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং পুলিশের নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে উত্তেজনার মধ্যে চট্টগ্রামের সমাবেশ স্থগিত করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
হেফাজতে ইসলাম এই সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে পুলিশ বুধবার বন্দর নগরীতে সব ধরনের সমাবেশ-মিছিলে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এর মধ্যেই রাত সোয়া ৮টার দিকে সমাবেশস্থল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
এর পৌনে এক ঘণ্টা পর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এদিকে সমাবেশ স্থগিতের পর হেফাজতে ইসলাম তাদের হরতাল কর্মসূচিও স্থগিত করেছে।
গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলেছি, গণজাগরণ মঞ্চ অহিংস আন্দোলন করে আসছে, আমরা কোনো সহিংসতা চাই না।
“এই কারণে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিংসতা এড়াতে চট্টগ্রামের এ মহাসমাবেশ স্থগিত করা হল।”
তিনি বলেন, “আমরা কোনো রক্তপাত চাই না এবং মানুষের জানমালের কথা বিবেচনা করে এ কর্মসূচি স্থগিত করেছি।”
চট্টগ্রামে সমাবেশের পরবর্তী দিনক্ষণ শাহবাগের সংগঠকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
চট্টগ্রামের সংগঠকরা এই সিদ্ধান্ত নিলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
রাত সোয়া ৯টার দিকে প্রজন্ম চত্বর থেকে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিবৃতি দেয়া হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। পরে তা অন্য জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামেও গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জামাল খানে প্রেসক্লাবের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি চলছিল। আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামে ১৩ মার্চ সমাবেশ ডাকা হয়েছিল, যাতে ঢাকা থেকে মূল সংগঠকদের অংশ নেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু শাহবাগবিরোধী হেফাজতে ইসলাম গণজাগরণ সমাবেশের বিরোধিতা করে বুধবার হরতাল ডাকে।
পাশাপাশি গণজাগরণ আন্দোলনের সমাবেশস্থলসহ লালদীঘি ময়দান এবং স্টেশন রোডে সভা করার ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার রাতের সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন প্রতি শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে চলবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়।
হাতবোমা বিস্ফোরণ
গণজাগরণ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনের আগে রাত সোয়া ৮টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিস্ফোরণের সময় গণজাগরণ মঞ্চের কোনো কর্মী বা সংগঠক সমাবেশস্থলে ছিলেন না। তবে তাদের অনেকে প্রেসক্লাবে ছিলেন।
প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কেউ এই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
বিস্ফোরণে একজন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সমাবেশস্থলে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
মফিজুর রহমান বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উস্কানি দিতে জামায়াত-শিবির চক্র পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালায়।”
মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকছে
দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ তিনটি স্থানে সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এরপরও হেফাজতে ইসলাম গণজাগরণ সমাবেশ প্রতিহত করার হুমকি দিয়ে এলে মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, বুধবার বন্দর নগরীর কোথায় সমাবেশ-মিছিল করা যাবে না।
পুলিশ কমিশনার মোহাং শফিকুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বুধবার নগরীতে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।”
সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীতে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের অনড় কর্মসূচির কারণে মহানগরীর নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।”
বন্দর নগরীর কোথাও সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা যাবে না বলেও জানান কমিশনার।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
গণজাগরণ মঞ্চের বক্তব্য
বিকালে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কারী শরিফ চৌহান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে বুধবারের কর্মসূচি পালিত হোক এবং চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করুক এটা আমরা সকলেই চাই। আমাদের কর্মসূচি অহিংস ও শান্তিপূর্ণ।”
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে হেফাজত ইসলামের প্রতি হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বানও জানানো হয়।
জামায়াতবিরোধী গণজাগরণ আন্দোলনে ‘অনৈসলামিক’ কর্মকাণ্ড হচ্ছে দাবি করে কয়েকটি ইসলামী দল শাহবাগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়। চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম এর একটি।
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইসলামসহ কোনো ধর্মের অনুভূতির ওপর কোনো ধরনের আঘাত হানার উদ্দেশ্য তাদের নেই। শুধু যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে তাদের।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতাকারী জামায়াত মানুষের ধর্মীয় অনুর্ভতিকে পুঁজি করে গণজাগরণ আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন শাহবাগের তরুণরা।
গণজাগরণ আন্দোলন কোনো ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে নয় উল্লেখ করে শরিফ চৌহান বলেন, “শুধু যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমাদের এই অহিংস আন্দোলন।”
হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা হেফাজতের
হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন রূহী রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ স্থগিত করায় তারাও হরতালের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
এর আগে বিকালে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সমাবেশে বক্তব্যে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
ওই সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ প্রতিহত করতে কাফনের কাপড় ও কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দেন হেফাজত নেতারা।
চট্টগ্রামে ‘রক্তের বন্যা’ বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে হেফাজতে ইসলামের ৩১৩ কর্মী শহীদ হওয়ার শপথও নেন।