রায় ফাঁসের তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ

saka choudhuri সাকা চৌধুরী সালাউদ্দিন কাদের salauddin kaderরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আদালতের নির্দেশে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার কথিত রায় ফাঁসের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়ম অনুযায়ী তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ইতোমধ্যে এর তদন্ত শুরু করেছে।”

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার আগেই ইন্টারনেটে ওই রায় পাওয়া গেছে বলে সালাউদ্দিন ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

রায় পড়ার সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সালাউদ্দিন কাদের বলেন,  “এগুলো পড়ার দরকার নাই, এগুলো তো গত দুই দিন ধরে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।”

মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন,আদালতের রায়ের কপি এক দিন আগেই কয়েকটি ওয়েবসাইটে পেয়েছেন তারা। ওই কপি হাতে নিয়েই সাংবাদিকদের সামনে আসেন তিনি।

এরপর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন মাহমুদ বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় ওই সাধারণ ডায়েরি করেন।

এই জিডিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রচারিত সমস্ত রায় ট্রাইব্যুনালেই প্রস্তুত করা হয়। রায় ঘোষণার আগে রায়ের কোনো অংশের কপি অন্য কোনোভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও কথিত খসড়া রায়ের অংশ কীভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত হলো বা কীভাবে ট্রাইব্যুনাল থেকে খসড়া রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস হল তা উদ্বেগের বিষয়।”

তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জিডিতে অনুরোধ করেন রেজিস্ট্রার।

পরে ট্রাইব্যুনালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগে খসড়া পর্যায়ে তা ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।

ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকেই খসড়া ‘লিকড’ হয়ে থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

“দেখা যায় যে, কথিত রায়ের খসড়ার সঙ্গে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোনো রায় নয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।… ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে কথিত ‘লিকড’ রায়ে কোনো অনুচ্ছেদ নম্বর নেই।”

কথিত খসড়া রায়ের অংশবিশেষ www.tribunalleaks.be  নামের একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কথিত রায় ১৬৫ পৃষ্ঠার। আর ট্রাইব্যুনালের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি ১৭২ পৃষ্ঠার।

কথিত রায়ে দোষী সাব্যস্ত করা বা দণ্ডের বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি। মূল রায়ে অভিযোগ ধরে ধরে প্রমাণ, দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে।

রায়ের প্রথম অংশে  বিচারকের নাম, প্রসিকিউটরদের নাম, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নাম, ভূমিকা, কার্যবিবরণী, ঐতিহাসিক পটভূমি, ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনাল আইনের নানা বিষয়ের সংজ্ঞা, বিভিন্ন বিদেশি আইনের প্রসঙ্গ, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর ক্ষমা, এই বিচার বিলম্বিত হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কথিত রায়ে এসব থাকলেও হুবহু মিল নেই।

রায়ে আদালতে সাকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা উঠে আসলেও ফাঁস হওয়া রায়ে তা এসেছে আংশিকভাবে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইন ও বিধি অনুসারে রায় ঘোষণার দিনই রায়ের সার্টিফায়েড কপি সবপক্ষকে দিতে হয়। এ কারণে রায় চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত না করে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ ও রায় ঘোষণা করা হয় না। কেবল সাজা সংশ্লিষ্ট অংশটি রায়ের দিন মাননীন বিচারকরা একমত হয়ে চূড়ান্ত করেন।

তিনি বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দায়িত্ব ছিল কোন কোন ওয়েবসাইটে কথিত খসড়া রায় আগের দিন পাওয়া গেছে তা ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা। কিন্তু তিনি তা না করে রায় ঘোষণার পর কথিত খসড়ার কপি দেখিয়ে মিডিয়ার সামনে দাবি করেন যে এটি আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে রয়েছে এবং এটি একটি ‘ডিকটেটেড রায়’।

“অভিযুক্তের বিজ্ঞ আইনজীবীর এই উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য অসদাচরণও বটে। নিঃসন্দেহে রায় ঘোষণার পর এমন দাবি করা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্তের অংশ।”

রেজিস্ট্রার বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। ট্রাইব্যুনালে কর্মরত কেউ যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে কি না, অথবা পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কোনো তদন্ত করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তদন্তের আগে ট্রাইব্যুনালের কেউ জড়িত আছে  কি না বলা যাবে না। আর পুলিশের তদন্তের অংশ হিসেবেই তথ্যপ্রযুক্তিবিদের সহায়তা নেয়া হবে।

এদিকে কথিত এই রায় ফাঁস নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন বুধবার ট্রাইব্যুনালে বলেন, “দেশের মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। এর পেছনে মস্তবড় বিনিয়োগ ও ষড়যন্ত্র আছে।”

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ