ফ্লাইওভার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে গুলিস্থান থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার।যদিও এর ৩০% কাজ এখনও বাকি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন। ২০১০ সালের ২২ জুন তিনিই ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় এ ফ্লাইওভারের সঙ্গে আশেপাশের প্রধান সড়ক ও বাস টার্মিনালের সংযোগ রাখা হয়েছে। চার লেনের এই উড়াল সড়কে প্রবেশের জন্য ছয়টি এবং বের হওয়ার জন্য সাতটি পথ রয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৩টার পর প্রধানমন্ত্রী গুলিস্তান প্রান্তে ফিতা কেটে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠেন।ওই গাড়িতে করেই তিনি যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী প্রান্তে টোল প্লাজায় পৌঁছান এবং ফলক উন্মোচন করেন।
সেখানে তিনি মোনাজাতে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অঙ্কিত ৫০ টাকার স্মারক মুদ্রা দিয়ে টোল টিকেট কেনেন।
এ প্রকল্পের ঠিকাদার ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম এ সময় একটি বাঁধানো স্মারক টোল টিকেট প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
টোল দেয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী পাঁয়ে হেঁটে টোল প্লাজা পার হন। প্লাজার নিচে ও ফ্লাইওভারের আশেপাশে জড়ো হওয়া হাজারো জনতার উদ্দেশে এ সময় হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সমর্থকদের এ সময় শেখ হাসিনার নামে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
ফ্লাইওভার উদ্বোধন শেষে ওসমানী মিলনায়তনের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ফ্লাইওভার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক মো. আশিকুর রহমান এবং ওরিয়ন গ্রুপ ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৮ সালে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও দফায় দফায় দৈর্ঘ্য ও খরচ বেড়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলো।
পিপিপির ভিত্তিতে এ প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ওরিয়ন গ্রুপই এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে।
ফ্লাইওভারের নকশা করে দিয়েছে কানাডীয় কোম্পানি লি কানাডা। আর নির্মাণ কাজে ঠিকাদার হিসাবে রয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল লিমিটেড। ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এই উড়ালসড়ক নির্মিত হয়েছে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ওরিয়ন গ্রুপেএ ফ্লাইওভারের ব্যবস্থাপনা, টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। চালু হওয়ার পর থেকে ২৪ বছরে পাওয়া টোলের ভিত্তিতে নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে তারা।
প্রতিদিনের আদায় করা টোলের ৫ শতাংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তহবিলে জমা হবে। ২৪ বছর পর এর দায়িত্ব নেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
হানিফ ফ্লাইওভারের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০টি জেলার যানবাহন ঢাকার প্রবেশপথের যানজট এড়িয়ে এই ফ্লাইওভার দিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবে।
যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তানের নিমতলী মোড় পর্যন্ত এ ফ্লাইওভারে যানবাহন প্রবেশের পর বের হওয়ার পথে টোল দিতে হবে। টোলের হার ধরা হয়েছে ট্রেইলার ২০০ টাকা, ট্রাক ১৫০ টাকা, বাস ১৫০ টাকা, মিনি বাস ১০০ টাকা, পিকআপ ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৫০ টাকা, জিপ ৪০ টাকা, প্রাইভেট কার ৩৫ টাকা, অটোরিক্সা ১০ টাকা ও দুই চাকার বাহন ৫ টাকা।
তবে পায়ে হেঁটে যাতায়াতে কোনো বাধা থাকবে না, এজন্য টোলও দিতে হবে না।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারের গুলিস্তান, পলাশী, মতিঝিল ও কুতুবখালি পর্যন্ত পথ জনসাধারণের দেখার জন্য খুলে দেয়া হয়। শনিবার যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভারটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের জনপথের অনেক কাজ বাকি আছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হবার সম্ভাবনা আছে।