প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দুরভিসন্ধি আছে

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পরও চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছে বিরোধী দল বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এতোদিন বলে এসেছেন, ২৪ অক্টোবরের পর আর সংসদ চলবে না। কিন্তু গতকাল (রোববার) তিনি তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করে পুরো ইউ টার্ন নিয়েছেন। এখন তিনি স্বভাবসুলভভাবে বলেছেন সংসদ চলবে।”

এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিকে অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করে রফিকুল।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি আছে। তার বক্তব্যের এক্সপ্রেশন সৎ নয়।”

রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান উদ্ধৃত করে বলেন, “পার্লামেন্ট বসতেই পারবে না- এটা কোথাও বলা নেই। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে।… নির্বাচনের ৪৫ দিন আগে পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে।”

নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রার্থী বাছাই এবং নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়ে থাকে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এখন সংসদের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ; সংসদও বহাল থাকবে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না দাবি করে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে কার্যউপদেষ্টা কমিটির। এর মধ্যে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতির বিল সংসদে পাস না করলে ২৫ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে অল কমিউনিটি ফোরামের আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “সংশোধিত সংবিধানের ১২৩ এর ‘ক’ উপধারায় বলা হয়েছে- সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে শর্ত থাকে যে, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংসদে বসতে পারবেন না।”

তবে রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৪ অক্টোবরের পর সংসদ বসতে পারবে না- এটা ভুল বোঝাবুঝি। সংবিধানে বলা আছে, প্রতি ৬০ দিন অন্তর সংসদ বসতে পারে।”

নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত সংসদ চালানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, “সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ কার্যকর হয়ে গেলে সংসদ ডাকার বিষয়টি শিথিল হয়ে যাবে। তাই আমি সবিনয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, সংসদ যদি চলতে থাকে তাহলে কোথায় থাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টি?”

এই বিএনপি নেতার দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনরা ২০/২৫টির বেশি আসন পাবে না ‘বুঝতে পেরেই’ প্রধানমন্ত্রী ‘আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে’ অধিবেশন দীর্ঘ করতে চাইছেন।

সংসদ ভেঙে দিলে রাষ্ট্রপতির আবার সংসদ ডাকার বিষয়ে সংবিধান থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদ ভেঙে দিলে রাষ্ট্রপতি সংসদ আবার ডাকতে পারবেন। সংবিধানে আছে, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, তবেই তিনি সংসদ আহ্বান করতে পারবেন।

“কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আভাস পাচ্ছি- সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। প্রধানমন্ত্রীর মাথায় বাকশালের ভুত চেপে বসেছে বলে তিনি সংসদ ভেঙে দেয়ার পরও আবার চালু করার কথা ভাবছেন। ”

রোববার আওয়ামী লীগের রূদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “পার্লামেন্ট যদি ভেঙেও দেয়া হয়, তারপরও কিন্তু রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ডাকতে পারেন। যদি কোনো এমার্জেন্সি সামনে দেখা দেয়, তাহলে ওই পার্লামেন্টই ডাকা যেতে পারে।”

সরকারের এ ধরনের চেষ্টার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, “আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি চাই না। আমরা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে গণঅভ্যুত্থানে তাদের পতন ঘটাতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

আওয়ামী লীগ গত ৫ বছরে ‘দেশের সব কিছু লুটপাট করে’ শেষ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আবার যদি ৫ বছর তারা ক্ষমতায় থাকে, তাহলে দেশটার কি অবস্থা হবে ভেবে দেখুন। তাই ঘরে বসে থাকার সময় নেই, সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।”

‘অনিবার্য সংকটের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র হুমকির মুখে ও সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অল কমিউনিটি ফোরামের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন বকুল।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, নাগরিক সংসদের সভানেত্রী খালেদা ইয়াসমীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ