দেশে সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে সরকার

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সংকট নিরসনে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক নন বলেই মনে করে বিরোধী দল বিএনপি।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, ২৫ অক্টোবরের জনসভাকে সামনে রেখে সরকার দেশে ‘সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র’ করছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা ছয়েক আগে বিএনপির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এলো।

বিএনপি সংসদে প্রস্তাব দিলে সংলাপ হতে পারে- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক নন। তিনি নির্দলীয় সরকার চান না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চান। লন্ডনে গিয়ে তিনি নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার নিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরে তা থেকে সরে গেছেন।’’

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৪ অক্টোবর সংসদে অধিবেশন শেষ হবে। তা থেকেও এখন তিনি সরে গেছেন। আমরা মনে করি, সংলাপের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।’’

বিএনপি সংসদে নির্দলীয় সরকারের কোনো প্রস্তাব তুলবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন ফখরুল।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ, সংসদও বহাল থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবরের পর নবম সংসদের চলতি অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেতারা ২৪ অক্টোবরের পর দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন।

এ দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে জনসভার ঘোষণা দিয়ে সেদিন দা, কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আগেই ২৫ অক্টোবর ঢাকায় জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছি। এরপর আওয়ামী লীগ সেইদিন জনসভা ডেকেছে। উদ্দেশ্য দেশে সংঘাত সৃষ্ট করা।”

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা অনুরোধ জানাব, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের পথে চলতে দিন। দেশ আজ সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কার্যালয় পুলিশ ঈদের পরদিন থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।”

বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন,  “সরকার ২৫ অক্টোবরের জনসভাকে সামনে রেখে সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করছে।”

ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির নেতা ওহাব আখন্দকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশেও পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংসদে নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আহবানের জবাবে তিনি বলেন, “সংসদে আমরা কেনো প্রস্তাব দিচ্ছি না, তা আমরা অনেকবার বলেছি। আমাদের সবচেয়ে কম সদস্য। নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব সংসদে দিলে তা  ভোটে যাবে। তখন ওই প্রস্তাব টিকবে না। জনগনের দাবি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা। আমরা সেই দাবির কথাই বলছি।”

অবশ্য বুধবার ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় দুই  নেত্রীর বক্তব্যেই আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়।

গণভবনে ঈদের শুভেচজ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  “আমাদের দরজা আলোচনার জন্য সব সময় খোলা। প্রস্তাব দিলে আলোচনা হবে। সংসদে আসুক। মুলতবি প্রস্তাব দিক। আলোচনা হবে।”

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা বলেন, “আমরা দেশে কোনো সংঘাত ও অশান্তি চাই না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সরকারকে বলব- আসুন এখনো সময় আছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করি।”

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তার ভাষণ সম্প্রচার করা হবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনি। এরপর প্রতিক্রিয়া জানাব।’’

দা-কুড়াল নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলে সাদেক হোসেন খোকা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন- এমন অভিযোগের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “পলিটিক্যাল রেটোরিক বলে একটা কথা। খোকা সাহেব বলেছেন, অতীতের মতো যদি আঘাত করো, জবাব দেব। এটি খোকার পলিটিক্যাল রেটোরিক।’’

এরপর গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে পাল্টা অভিযোগ তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বলছেন, রাস্তায় বিরোধী দল দাঁড়ালে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে। ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যা করা হবে। মন্ত্রীদের এসব হুমকির কথা তো গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশ পায় না।”

ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ